বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তাদের পরবর্তী প্রজন্মের বিমানের জন্য কয়েকটি বিমান যাচাই করেছে। যার মধ্যে রয়েছে সু-৩০, সু-৩৫, মিগ ৩৫, গ্রিপেন ও জে-১০ এর মত বিমানগুলি রয়েছে।

আপাতত এক স্কোয়াড্রন বা ১৬ টি হেভি MRCA এর পাশাপাশি এক স্কোয়াড্রন লাইট এটাক বিমান নেবার প্লান রয়েছে। হেভি ফাইটারের দৌড়ে বলতে গেলে মিগ-৩৫ ই এগিয়ে আছে(যদি না অন্যকিছু ঘটে) যেহেতু এটি দুই ইঞ্জিনের বিমান আর BAF এর মেরিটাইম স্ট্রাইক রোলের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। পাশাপাশি লাইট বা হালকা জাতীয় ফাইটারের ক্ষেত্রে জে-১০ পছন্দ হলেও এর ইঞ্জিন সমস্যার কারনে BAF প্রতিবারই এটি রিজেক্ট করেছে। তাই আপাতত জে-১০ নেবার চিন্তাভাবনা বলতে গেলে নেই। আর তাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এর পরিবর্তে সু-৩০/৩৫ নেবার প্লান করছে। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে সু-৩০ ই আসার সম্ভাবনা বেশি।

আর আমাদের দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার উভয়ের কাছেই সু-৩০ আছে। তারা উভয়ই এই বিমানের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা সম্পর্কে অবহিত।

তাই আমার মতে, আমাদের এমন কিছু নেওয়া উচিত যা বার্মা বা ভারত উভয় দেশের সাথেই ডিটারেন্স হিসেবে কাজ করবে। আর তাই গ্রিপেন ই হতে পারে এখানে ডিটারেন্স।

প্রথমত আমরা শক্তিমত্তার বিচারে সু-৩০ এর সাথে গ্রিপেনের তুলনা করছিনা। সু-৩০ ডাবল ইঞ্জিনের একটি হেভিওয়েট ফাইটার যেখানে গ্রিপেন সিঙ্গেল ইঞ্জিনের মাঝারি আকারের ফাইটার। আমরা এখানে মূলত আমাদের পেক্ষাপটে সু-৩০ এবং গ্রিপেন নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করছি।

চলুন তাহলে শুরু করা যাক,

Su 30 একবার বম্বিং করলে পুনরায় যুদ্ধে যেতে ৩৬ ঘন্টা সময় লাগে, যেখানে Gripen একবার যুদ্ধ করে ফিরে এসে পুনরায় তৈরি হতে ১৫-২০ “মিনিট” সময় নেয়।

আর নিম্নমানের পার্টস সরবরাহের জন্য রাশিয়া কুখ্যাত। ভারতীয়দের কাছে রাশিয়ার নিম্নমানের পার্টস সরবরাহ ওদের ক্রাশ উৎসবের অন্যতম কারন। তাই ওরা এখন ইউরোপীয় বিমানের দিকে ঝুকছে।

১টা গ্রিপেনের দাম ৭০ মিলিয়ন, ৩৫ বছর লাইফটাইমে মেইনটেন্যান্স খরচ আনুমানিক ৩০০ মিলিয়ন। সু ৩০ এর দাম ৩৭.৫ মিলিয়ন। (ওয়েপন প্যাকেজ সহ উভয়ের দাম আরো বেশি)

অস্ত্রসস্ত্রসজ্জিত গ্রিপেন

৩০ বছর লাইফটাইমে মেইনটেন্যান্স খরচ আনুমানিক ৯০০ মিলিয়ন (সু ৩০ এর মেইনটেন্যান্স খরচ গ্রিপেনের ৩ গুন) তাছাড়া সু ৩০ গ্রিপেনকে ডিটেক্ট করার আগেই গ্রিপেন সু ৩০ কে ডিটেক্ট করে BVR মারতে সক্ষম।

সু ৩০ রাডারে ডিটেক্ট করার আগেই গ্রিপেনের হাতে ১২০ কি.মি. দূরে থাকতেই মার খেয়ে যাবে।

১টা গ্রিপেন ৪টা BVR(Beyond the Visual Range) বহন করে। অর্থাৎ ডগফাইট শুরু হওয়ার আগেই ১টা গ্রিপেন ৪টা সু৩০ ধ্বংস করতে পারবে।

তাই সে ডগফাইটে হেরে গেলেও কিলিং রেশিও হবে ১:৪

কোয়ান্টিটির দিক দিয়ে সু-৩০ অনেক এগিয়ে থাকলেও রেলিয়াবিলিটি ও কোয়ালিটির দিক দিয়ে গ্রিপেন এগিয়ে।

ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের সুপার সুখোই-৩০

সু-৩০ এর অস্ত্রবহনের পরিমান, সার্ভিস সিলিং, রেঞ্জ গ্রিপেনের চেয়ে বেশি আবার গ্রিপেন ফুয়েল ইকোনমিক এবং এর মেইনটেন্যান্স খরচ কম। গ্রিপেন ওয়েপন কোয়ালিটিতে এগিয়ে আর এর ডাটা লিংক ও পঞ্চম প্রজন্মের। গ্রিপেনের রাডার ক্রস সেকশন যেখানে 0.5-1.5 সেখানে সু-৩০ এর RCS 1.0-3.5। সুতরাং এক্ষেত্রে গ্রিপেন এগিয়ে।

গ্রিপেন সর্বোচ্চ ১৪,০০০ কেজি ওজন নিয়ে ফ্লাই করতে পারে, যেখানে সু-৩০ ৩৪,৫০০ কেজি!

সু ৩০ এর ফ্লাইং কস্ট ঘন্টাপ্রতি যেখানে প্রায় ২০ লাখ টাকা(USD 23000) গ্রিপেনের ফ্লাইং কস্ট সেখানে প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজারের মত(USD 7800)।

তবে গ্রিপেনের NG ভার্সনে এফ-১৮ এর ইঞ্জিন ইউস করা হয়েছে এবং ফুয়েল ট্যাংকের সাইজ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে এর সার্ভিস সিলিং, অস্ত্রবহন ক্ষমতা, রেঞ্জ ইত্যাদি আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর ফলে এর ফ্লাইং কস্টের পরিমান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

গ্রিপেনে একটি ইঞ্জিন আছে, যেখানে সু-৩০ তে দুইটি। সুতরাং একটি ইঞ্জিন ফেইল হলেও অপরটি দিয়ে পাইলট নিরাপদে ফিরে আসতে পারবেন।

রাশিয়া থেকে সু-৩০ নিলে ওরা নিজেদের ব্যবহৃত সু-৩০ এর চেয়ে লো-কোয়ালিটির সু-৩০ দিবে যেখানে ওয়েস্টার্ন/আমেরিকানরা নিজেদের ব্যবহৃত বিমানের চেয়ে উন্নত কোয়ালিটির বিমান/বিমানের পার্টস দেয়।

সু-৩০ এর সম্পূর্ণ ওয়েপনপ্যাকেজ রাশিয়ার কিন্তু গ্রিপেনের ক্ষেত্রে প্রায় পুরো ওয়েপনপ্যাকেজের জন্য আমেরিকার উপর নির্ভর করতে হবে। তারমানে সুইডেন থেকে বিমান নিলেও ওয়েপনের জন্য আমেরিকার মর্জির ওপর নির্ভর করতে হবে।এবার বাকিটা নিজেই যাচাই করুন।

Facebook Comments

comments