রয়েল নেভির নতুন সংযোজিত কুইন এলিজাবেথ ক্লাস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন। জানতে ইচ্ছা হয়না এর ভেতরটায় কি কি আছে ??

আজ এ নিয়েই এই পোস্টের আয়োজন করেছি।

 

সাধারণ তথ্য: শুরুতেই বলে নিই, সুবিশাল এই ক্যারিয়ারটি প্রায় ৭২০০০ টন। লম্বায় ৯৩২ ফিট এবং চওড়ায় ২৩৯ ফিট। এর টোটাল ক্রুর সংখ্যা ১৬৭৯ জন। মোট ৪০ টি বিমান ও হেলিকপ্টার অপারেট করতে সক্ষম।

পাওয়ার জেনারেশন: এর স্টিম টার্বাইনগুলো প্রায় ৩০০০০০ কেটলি গরম কিংবা একসাথে ৫৫০০ পরিবারের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

প্রোপেলার: দুটি ব্রোঞ্জের তৈরি ৩৩ টনের প্রোপেলার যা একে ৩০ নটিকাল মাইল গতিতে ছুটতে সাহায্য করে।

এয়ারক্রাফট লঞ্চিং এবং ল্যান্ডিং: এক্ষেত্রে এ ক্যারিয়ার এর কোনো ক্যাটাপাল্ট এর সাহায্যে টেক অফের ব্যাবস্থা নেই। যদিও তা দরকারও নেই রয়েল নেভির। কারণ এফ-৩৫ এতে অপারেট করা হবে। ১৩ ডিগ্রী স্কি জাম্প র‍্যাম্প ব্যাবহার করে ক্যাটাপাল্ট এর চেয়ে অনেক কম ফুয়েল খরচে টেক অফ করার ব্যাবস্থা রয়েছে। ল্যান্ডিং ও হবে এরেস্টিং হুক ছাড়া। এক্ষেত্রে এটি ব্যাতিক্রম। অন্যান্য ক্যারিয়ারের মত এতে এরেস্টিং হুক ই নেই! এফ-৩৫বি একটি স্পেশাল ম্যানুয়েভার ও ভেক্টরিং নজেল এর মাধ্যমে ল্যান্ডিং করবে।

পানির চাহিদা নিবারণ: প্রতিদিন বিশেষ পরিশোধন এর মাধ্যমে প্রায় ৫০০ টন বিশুদ্ধ খাবার পানি সমুদ্র থেকে প্রক্রিয়াকরণ এর ব্যাবস্থা রয়েছে।

খাদ্যের চাহিদা নিবারণ: এর ক্যাটারিং ৪ টি গ্যালি এবং ৪ টি ডাইনিং এরিয়া রয়েছে যা ৬৭ জন স্টাফ এবং ৪০ জন শেফ এর মাধ্যমে ঘন্টায় ৯৬০ জনের খাবার পরিবেশন করতে পারে। ১৬০০ জনের প্রায় ৪৫ দিনের খাবার রিজার্ভে থাকে। শিপের বেকারি দিনে ১০০০ টি ব্রেড বানাতে পারে। এবং সাথে স্কোন, ডোনাট এবং একলেয়ারস ও !

এছাড়াও ৬৬০০০ সসেজ (৪.২ মাইল লম্বা সারি করে সাজালে), ২৮১০০ বেকন (২.১ টন ওজন), ৬৪৮০০ ডিম ( ২১৬০০ অমলেটের জন্য যথেষ্ট) এবং ১২০০০ শিম।

মেডিকেল: এতে আছে অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, ডেন্টাল সার্জারি এবং ১২ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড যা ১১ জন স্টাফের তত্ত্বাবধান এ পরিচালিত হয়।

অফিসার্স কোয়ার্টার: একটি ডাইনিং, একটি গ্যালি এবং একটি শয্যার জন্য কোয়ার্টারর রয়েছে জাহাজের পিছনের দিকে।

ক্যাবল ম্যানেজমেন্ট: পুরো জাহাজ জুড়ে ২০০০ মাইল এর সমতুল্য তার এবং ১২০০ মাইল এর সমতুল্য ফাইবার অপটিক্স তার রয়েছে।

কারাগার: জাহাজে তিন সেলের কারাগার আছে যা রয়েল নেভির পুলিশ ফোর্সের তত্ত্বাবধান এ পরিচালিত হয়।

বিমান উত্তোলন এর লিফট: জাহাজটিতে ২ টি বিমান উত্তোলন এর লিফট আছে যা ৬০ সেকেন্ডে বিমান উত্তোলন এ সক্ষম। এগুলো এতটাই শক্তিশালী যে পুরো জাহাজের সবগুলো মানুষকে একত্রে উঠাতে সক্ষম !

ক্রুদের কেবিন: ১১৮ টি কেবিন যার প্রতিটিতে ৮ জন থাকার ব্যাবস্থা আছে। ফোল্ডিং সোফায় ঘুমাতে হয়।এছাড়াও জাহাজের সামনের দিকে গোসলখানা, টয়লেট, বিনোদন এবং জিমের ব্যাবস্থা আছে।

সার্চ রাডার: একটি ট্র‍্যাকিং রাডার যা ১০০০ টি টার্গেটকে ২৫০ কিমি দূর থেকে ট্র‍্যাক করতে পারে।

ফুয়েল ট্যাংক: গোসলখানার নিচে বিশাল এভিয়েশন এবং অন্যান্য ফুয়েল ট্যাংকের সমাহার আছে। ক্যাপাসিটি আমার জানা নেই।

মিশন কন্ট্রোল রুম: এখানে থেকে ব্যাটল প্ল্যান, ব্যাটল স্ট্র‍্যাটেজি এবং ওয়ার প্ল্যানিং এ কো অর্ডিনেট করা হয়।

মুরিং ডেক: জাহাজের স্কি জাম্পের ঠিক নিচেই বাহিরের সৌন্দর্য দেখা ও আরামে চা-কফি খাওয়ার ব্যাবস্থা আছে !

নোঙ্গর: ১০ ফিট ২ ইঞ্চি উচু এবং প্রতিটি ১৪ টন ভারী (একেকটা ডাবল ডেকার বাসের সমান) ২ টি নোঙ্গর আছে।

ট্র‍্যাকিং রাডার: ২৩০০ মাইল প্রতিঘন্টায় ছুটে আসা টেনিস বল সাইজ টার্গেট ট্র‍্যাক করতে পারে।

সেল্ফ ডিফেন্স: প্রতিরক্ষা হিসেবে এতে আছে ফালানক্স কিউস যা মিনিটে ৩০০০-৪০০০ রাউন্ড ২০ মিমি রাউন্ড ফায়ার করে ধেঁয়ে আসা মিসাইল প্রতিরোধ করতে পারে। এগুলা ম্যানুয়ালি অপারেট করা যায়।

এছাড়াও দুটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার এবং এর ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমে পাওয়ার জেনারেশনের জন্য একটি রোলস রয়েস এলএম-২৫০০ গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন রয়েছে।

 

কুইন এলিজাবেথ ক্লাস ক্যারিয়ারের কিছু ছবিঃ

HMS Queen Elizabeth

HMS Queen Elizabeth

HMS Queen Elizabeth

HMS Queen Elizabeth

HMS Queen Elizabeth

HMS Queen Elizabeth

HMS Queen Elizabeth

HMS Queen Elizabeth

Facebook Comments

comments