অনেকেই আছেন যারা মনে করেন বাংলাদেশ হয়তো অস্ত্র বানাতে পারেনা !
অথচ আমাদের দেশেই অনেক বিশ্বমানের অস্ত্র তৈরি হয় এবং শীঘ্রই আমরা অস্ত্রের রপ্তানীকারক দেশ হিসেবে আভির্ভূত হতে যাচ্ছি। আপনাদের জ্ঞাতার্থে নিম্নে বাংলাদেশে তৈরি যুদ্ধাস্ত্রের একটা তালিকা দেয়া হল।
আসুন জেনে নেই বাংলাদেশে তৈরি কিছু অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের কথাঃ
১. বিডি-০৮ এসল্ট রাইফেল

বিডি-০৮ এসল্ট রাইফেল
চীনা সহায়তায় এটি বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় বানানো হয়। হাফ কি.মি. এর অধিক দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতেও এটি আঘাত হানতে পারে। এই রাইফেলে সুইডেনের অত্যাধুনিক ক্যালিমেটর সাইট যুক্ত করা হয়েছে যা এর একুরেসি বৃদ্ধি করেছে। ভবিষ্যতে এতে দেশে বানানো ক্যালিমেটর সাইট লাগানোর কাজ চলছে। আমাদের প্রতি বছরে ১৬,০০০ রাইফেল বানানোর সক্ষমতা আছে।
২. মেশিনগান

বিডি-০৮ লাইট মেশিনগান
বিদেশ থেকে প্রযুক্তি কিনে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় কয়েক মডেলের অত্যাধুনিক মেশিনগান বানানো হয়। এদের মাঝে বিডি-০৮ লাইট মেশিনগান, বিডি-১৪ মেশিনগান উল্লেখযোগ্য।
৩. আর্জেস ৮৪ গ্রেনেড

আর্জেস গ্রেনেড | GREN-84BD
ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া থেকে প্রযুক্তি কিনে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় এই মডেলের গ্রেনেড বানানো হয়। প্রতি বছর পাচ লাখ গ্রেনেড বানানোর সক্ষমতা আছে।
৪. সাজোয়া যান

অরুনিমা বলিয়ান ট্রাক
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি-বিএমটিএফ এ জাপানি ইসুজু ট্রাকের প্রযুক্তি কিনে হুবহু একই ডিজাইনের অরুনিমা বলিয়ান মিলিটারি ট্রাক বানানো হয়। এছাড়া, আরো কয়েক মডেলের গাড়ি যেমন মিতসুবিসি পাজেরো, মিতসুবিসি, ল্যান্সার, রোভার, ডিফেন্ডার ইত্যাদি মডেলের গাড়ি বিএমটিএফ ও প্রগতি কোম্পানিতে এসেম্বল করা হয়।
৫. মর্টার ও কামানের গোলা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রায় ৩৫০+ টাওয়েড কামান আছে। এছাড়া মর্টার আছে প্রচুর। এগুলোর জন্য বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় ৬১ মি.মি., ৮১ মি.মি. ও ১০৫ মি.মি. গোলা বানানো হয়।
৬. টহল জাহাজ

বিএমটি হালদা সাবমেরিন টাগবোট
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জন্য বাংলাদেশ কয়েক মডেলের টহল জাহাজ তৈরি করে। এছাড়া স্পিডবোট, গানবোট, সাবমেরিন টাগবোট ও বানানো হয়।
৭. পদ্মা ক্লাস ওপিভি

পদ্মা ক্লাস অফশোর পেট্রোল ভেসেল
এটি বাংলাদেশে তৈরি প্রথম আধুনিক যুদ্ধজাহাজ। অস্ত্র হিসেবে এতে বিমান বিধ্বংসী ও ছোট জাহাজ বিধ্বংসী কামান আছে। শুনলে অবাক হবেন, মায়ানমারের বানানো ফ্রিগেটের চেয়ে বাংলাদেশের এই ছোট পেট্রল জাহাজ অধিক গভীর সাগরে টহল দিতে পারে।এছাড়া যুদ্ধাবস্থায় এতে মিসাইল যুক্ত করার ব্যাবস্থা আছে।
৮. ল্যান্ডিং ক্রাফট

শক্তি সঞ্চার ল্যান্ডিং ক্রাফট
শত্রুদেশে নানারকম সাজোয়া, সেনা ও অস্ত্র মোতায়েনের ক্ষেত্রে ল্যান্ডিং ক্রাফটের জুড়ি নেই। বাংলাদেশ কয়েক মডেলের ল্যান্ডিং ক্রাফট তৈরি করে। তন্মধ্যে হাতিয়া ক্লাস ল্যান্ডিং ক্রাফট সবচেয়ে উন্নত। শুনলে অবাক হবেন, সেনাবাহিনীর জন্য বানানো আমাদের ল্যান্ডিং ক্রাফটে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং এর ব্যাবস্থা আছে।
৯. দুর্জয় ক্লাস এলপিসি

দুর্জয় ক্লাস লার্জ পেট্রোল ক্রাফট
এগুলো বাংলাদেশে তৈরি সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ। আসলে এগুলো করভেটের মত বড় ও উন্নত হলেও টেকনিক্যাল কারনে এলপিসি নামে ডাকা হয়। অস্ত্র হিসেবে এতে আছে ১ টা ৭৬ মি.মি. জাহাজ বিধ্বংসী কামান, ২ টা ২০ মি.মি. বিমান বিধ্বংসী কামান, ১২ টা এন্টি সাবমেরিন রকেট লঞ্চার এবং ৪ টা এন্টিশিপ মিসাইল। অনেক দেশের করভেটও এতটা শক্তিশালী নয়।
১০. দুর্গম ক্লাস যুদ্ধজাহাজ

দুর্গম ক্লাস সেমি-স্টিলথ লার্জ পেট্রোল ক্রাফট
এটি মূলত দুর্জয় ক্লাস যুদ্ধজাহাজের এন্টি-সাবমেরিন ভার্সন। শত্রুর সাবমেরিন খুজে বের করা ও তাকে চিরতরে সাগরে ডুবিয়ে দেয়াই এর প্রধান কাজ। দুর্জয় ক্লাস যুদ্ধজাহাজের মত এই ক্লাসের জাহাজও অনেক গভীরে টহল দেয়ার মত করে ডিজাইন করা হয়েছে। অস্ত্র হিসেবে এতে আছে ১ টা ৭৬ মি.মি. জাহাজ বিধ্বংসী কামান, ২ টা ৩০ মি.মি. বিমান বিধ্বংসী কামান ও ৬ টা টর্পেডো লঞ্চার।
১০. বাজ ড্রোন

বাজ ড্রোন
এটা BAC এ বানানো গোয়েন্দা ড্রোন। বাংলাদেশে বানানো কয়েক মডেলের ড্রোনের মধ্যে এটাই সবচেয়ে উন্নত।
১১. টাইপ-৯২ পিস্তল

টাইপ ৯২ পিস্তল
চীন থেকে QSZ-92 সেমি অটোমেটিক পিস্তলের প্রযুক্তি কিনে বাংলাদেশ এই পিস্তল তৈরি করে। এটি ২ ধরনের বুলেট ইউজ করতে পারে। এর ম্যাগাজিনে ৯ মি.মি. এর ১৫ টি অথবা ৫.৮ মি.মি. এর ২০ রাউন্ড বুলেট রাখা যায়। এর সর্বোচ্চ রেঞ্জ ১০০ মিটার।
১২. মডিফাইড ভেহিকেলস
বাংলাদেশ নিজেই কিছু কিছু যুদ্ধযানের আধুনিকায়ন ঘটায়। যেমন: টাইপ-৬২ এলবিটিকে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে মডিফাই করে এপিসি ও এসপিজি বানানো হয়েছে। টাইপ-৫৯ ট্যাংককে প্রায় আধুনিক টি-৭২ এর সমকক্ষ করা হয়েছে। টি-৫৪ মডেলের ট্যাংককে মডিফাই করে আইএফভি বানানো হয়েছে।

দুর্জয় ট্যাংক
১৩. বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট
বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বানানো হয় যা ৭.৬২ মি.মি. ন্যাটো বুলেটের বিপরীতে পরীক্ষিত। এছাড়া, বেসরকারীভাবেও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বানানো শুরু হবে।
এছাড়া যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে,
- বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় ১৫৫ মি.মি. কামানের গোলা বানানো হবে।
- ১২২ মি.মি. গাইডেড রকেট (WS-22A) বানানো হবে।
- বিমান বিধ্বংসী মিসাইল(FN-16) বানানো হবে।
- স্বাধীনতা ক্লাস করভেট বানানো হবে যা এই অঞ্চলে সবচেয়ে আধুনিক করভেটের মাঝে অন্যতম।
এই কয়টি জিনিস বানানো শুরু হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
এছাড়া, ২০২১ সালের মধ্যেই জেট ইঞ্জিন চালিত ট্রেইনার+গ্রাউন্ড এটাক বিমান তৈরি শুরু করার পরিকল্পনা আছে। একইসাথে ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইলের এমুনিশনের প্রযুক্তি কেনার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। সেইসাথে ২০২১-২২ সালেই স্টিলথ ফ্রিগেট বানানো শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।
আরেকটি খুশির খবর হল বাংলাদেশ স্বল্প রেঞ্জের এন্টিশিপ মিসাইল প্রযুক্তি সহ কিনতে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে চীনা সি-৭০৪ মিসাইল কেনা হতে পারে।

ছবিতে অটোম্যাট মার্ক-২ এর সাথে সি-৭০৪ মিসাইল
Leave a Reply