বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নৌবাহিনীর উপরই উপকূলরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। কিন্ত এর ফলে নৌবাহিনীর নিজস্ব কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতো এবং কিছু আইনী জটিলতা সৃষ্টি হতো। তাছাড়া সময়ের পরিক্রমায় দায়িত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে নৌবাহিনীর একার পক্ষে উপকূল রক্ষার কাজ চালিয়ে যাওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে ওঠে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় নৌবাহিনীর সহায়ক হিসেবে একটি আধাসামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

সকল দিক বিবেচনা করে অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনী থেকে প্রাপ্ত ২ টি জাহাজ দিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড

বর্তমানে প্রায় ৩৪০০ জনবল ও ৬৩ টি জাহাজ নিয়ে এই বাহিনী আমাদের উপকূল রক্ষায় সদা নিয়োজিত আছে। এই বাহিনীর নীতিবাক্য হচ্ছে Guardian at Sea বা সমূদ্রের অভিভাবক। এই বাহিনীর হেডকোয়ার্টার ঢাকায় অবস্থিত।

এই আধাসামরিক বাহিনী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিবিধ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে উপকূল অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিধান এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে। এই আধাসামরিক বাহিনীটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ। বাহিনীর কর্মকর্তাগণ বাংলাদেশ নৌবাহিনী থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আসেন।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মূলত সমুদ্রে নানারকম দস্যুতা মোকাবেলা, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, সাগরে নজরদারী, বিভিন্ন দূর্যোগে ত্রানকাজে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি কাজ করে থাকে। এছাড়া যুদ্ধকালীন অবস্থায় এটি পুরোপুরিভাবে নৌবাহিনীর অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং নৌবাহিনীর কমান্ড অনুযায়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।

 

যুদ্ধজাহাজ সমূহঃ

  • মিনারভা ক্লাস করভেটঃ ৪ টি
  • গানবোটঃ ৪ টি
  • রিভারাইন পেট্রল ভেসেলঃ ৬ টি
  • মেটাল শার্ক বোটঃ ৯ টি
  • ডিফেন্ডার ক্লাস বোটঃ ৩৫ টি
  • অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্ক বোটঃ ৬টি
  • হারবর পেট্রল বোটঃ ৪ টি
  • কোস্টাল পেট্রল ক্রাফটঃ ৫ টি

আধুনিকায়নঃ

আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ইতিমধ্যে ৪ টি অত্যাধুনিক ইউরোপীয় করভেট ব্যবহার করে যেগুলো আকার ও টেকনোলজির ক্ষেত্রে মিয়ানমার নৌবাহিনীর করভেটের চেয়ে উন্নত। এছাড়া, অদূর ভবিষ্যতে নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় হ্যামিল্টন ক্লাসের ২টি টহল ফ্রিগেট কোস্টগার্ডে যুক্ত করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে ১৭১ ফুট(৫২ মিটার) লম্বা দুটি টহল জাহাজ এবং ১৪২ ফুট(৪৩.৪ মিটার) লম্বা আরো ২টি উচ্চ দ্রুতগামী টহল জাহাজ বানানো হচ্ছে যেগুলো অতি শীঘ্রই কোস্ট গার্ডে যুক্ত করা হবে।

একই স্থানে ইন্দোনেশীয়ার সহাতায় আরও ৬ টি X12 মডেলের হাইস্পিড পেট্রল বোট বানানো হবে যা ঘন্টায় ৬৫ কি.মি. গতিবেগে ছুটতে সক্ষম।

খুলনা শিপইয়ার্ডে ২ টি পদ্মা ক্লাস যুদ্ধজাহাজ ও একটি ভাসমান ক্রেন বানানো হচ্ছে যা শীঘ্রই কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেয়া হবে। কোস্টগার্ডের এভিয়েশন উইং খোলা হবে এবং ২০২৫ সালের আগেই ১০ টি সার্চ এন্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার রাখা হবে। উল্লেখ্য, মায়ানমারের নৌবাহিনীতেও এতগুলো হেলিকপ্টার নেই।

 

কিছু ছবিঃ

 

Facebook Comments

comments