হোভারক্রাফ্ট হলো এমন একধরনের যান যেটি পানি, মাটি এবং বরফ সহ যে কোন স্থান দিয়ে চলতে পারে। আর তাই বহুমাত্রিক যেকোন অপারেশন পরিচলনা করতে এই যানটি যথেষ্ট উপযোগী।

হোভারক্রাফ্ট প্রথম তৈরি করে ইংল্যান্ড ১৯৭০ সালে। প্রথম হোভারক্রাফ্টের ডিজাইন করে ইংল্যান্ড, তারপর আস্তে আস্তে আমেরিকা চীন, জাপান, ডেনমার্ক, রাশিয়া, ইরান সহ আরো বেশকিছু দেশ হোভারক্রাফ্ট তৈরি করা শুরু করে।

 

হোভারক্রাফ্ট হলো বায়ুভর্তি এক ধরনের বিশেষ যান যা সাধারণত স্থল, পানি, মাটি এবং বরফ সহ যেকোনো উপরিভাগ দিয়ে চলতে পারে। সাধারণত হোভারক্রাফ্ট বৃহৎ আকারের হয়, তবে ছোট আকারের ও আছে। তেমনি Zubr Class হোভারক্রাফ্ট হলো রুশ নেভির বৃহৎ আকারের একটি হোভারক্রাফ্ট। এটি তৈরি করেছে রাশিয়া আর ইউক্রেন।

বেশিরভাগ দেশেই সেনাবাহিনীনৌবাহিনী এটি ব্যবহার করে থাকে। তবে কিছু কিছু উন্নত দেশ পরিবহন ও অন্যান্য কাজেও এটি ব্যবহার করে।

 

জুবর ক্লাস হোভারক্রাফ্টঃ

এই ক্লাসের হোভারক্রাফ্টে ৫ টি ইঞ্জিন রয়েছে এবং ৩২ জন ক্রু সহ মোট ৫০০ জন ট্রুপস বহন করতে পারে। কিন্তু ট্রুপস এর সাথে যদি কার্গো বহন করে তবে তবে তখন ওজনের ভারসাম্য বজায় রেখে ট্রুপস বহন করতে পারে। এর দৈর্ঘ্য ১৮৮ ফুট, সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৫৫৬ কি:মি এবং ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কি:মি বেগে ছুটতে পারে। ফুল লোডেড অবস্থায় এর ওজন ৫৫০ টন এবং একটানা ৫ দিন পযন্ত অপারেশন পরিচালনা করতে পারে। আর এতে বিভিন্ন ধরনের ভেহিকেল এবং ট্যাংক পরিবহন করা যায়।

 

কিভাবে চলে হোভারক্রাফ্ট?

একটা জাহাজ পরিচালনা করতে একজন ক্যাপ্টেনের যতটা দক্ষতা লাগে তার চাইতে বেশি দক্ষতা লাগে হোভারক্রাফ্টের ক্যাপ্টেনের। কারন এই যানটি চলে সম্পূর্ণ বাতাসের উপর আমাদের চারপাশের বায়ুর যেই চাপ রয়েছে তার চাইতে ১০ গুন বেশি চাপ দিয়ে চালাতে হয় এই হোভারক্রাফ্ট। এই উচ্চ পরিমানের চাপের জন্য হোভারক্রাফ্টে থাকে উচ্চমাত্রার ৫ টি শক্তিশালি ইঞ্জিন।

এই হোভারক্রাফ্টের তলায় বেশ কয়েকটি হোল রয়েছে যেগুলো দিয়ে মাটিতে এত পরিমান বায়ুর চাপ দেওয়া হয় যে এর ফলে এত বিশাল জাহাজটি ভেসে উঠে, এক কথায় জাহাজটি বায়ুর উপরে চলে। যেহেতু হোভারক্রাফ্ট বাতাসের উপর ভেসে চলে সেহেতু যে কোনো যায়গায় এটি দিয়ে অপারেশন পরিচালনা করা যায়। হোভারক্রাফ্টে যত বেশি ওজন নেওয়া হবে তখন তত বেশি বায়ুর চাপ দিতে হয়।

 

অস্ত্রঃ

৬ ব্যারেলের ২ টি Ak-106 ৩০ মি.মি. এর ক্লোজ
ওয়েপন সিস্টেম, যা তৈরি করা হয়েছে এয়ার টার্গেটকে প্রতিহত করার জন্য। এর ম্যাগাজিন ক্যাপাসিটি ৫০০ রাউন্ড, পার-মিনিটে ১০০০ রাউন্ড ফায়ার করা যায় এবং এর রেঞ্জ ৫ কি.মি.।

২টি ২২০ মি.মি. মাল্টিপল লাঞ্চ রকেট লাঞ্চার। এতে যে রকেট ব্যবহার করা হয় তার রেঞ্জ ৩৫ কি.মি.। এখানেও ওজনের ভারসাম্য বজায় রেখে রকেট বহন করবে।

৪ টি সারফেস টু এয়ার মিসাইল লাঞ্চার, যার রেঞ্জ ৫.২ কি.মি.। আর একবার ফায়ার করার পর এটি সেটআপ করতে মাত্র ১৩ সেকেন্ড সময় লাগে।

 

ওজন বহনঃ

এই হোভারক্রাফ্ট মোট ১৩০ টন কার্গো বহন করতে পারে। ৮ টি BMP-3 ভেহিকল এবং ৩ টি T-90s ট্যাংক বহন করতে পারে।

তবে কোস্ট গার্ডেরকোস্ট গার্ডের জন্য যে হোভারক্রাফ্ট তৈরি করা হয় তাতে তেমন কোনো অস্ত্র থাকেনা, শুধু থাকে মেইনগান। আর আকারে ছোট এবং ওজন ও কম বহন করতে পারে।

রাশিয়ার বাইরে এই হোভারক্রাফ্ট গ্রীস, চীন সহ কিছু দেশ ব্যবহার করে। তবে ইউক্রেন তাদের সব কয়টি হোভারক্রাফ্ট অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে।

Zubr-Class Hovercraft

জুবর ক্লাস হোভারক্রাফ্টে BMP-3 ভেহিকল

Zubr-Class Hovercraft

জুবর ক্লাস হোভারক্রাফ্ট থেকে সেনাদল নেমে আসছে

Zubr-Class Hovercraft

বালির উপর চলছে হোভারক্রাফ্

Facebook Comments

comments