বাংলাদেশ আর্মির সদস্য সংখ্যা ১ লক্ষ ৬০-৭০হাজার, এছাড়া রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রয়েছে আরো ৭০হাজারের মত সৈন্য। যারা যুদ্ধের সময় একসাথে কাজ করতে পারবে।
কিন্তু আজকে এই বাহিনী নয় বরং কথা বলবো বাংলাদেশের সবথেকে বড় সেচ্ছাসেবী বাহিনী বাংলাদেশ আনসার সম্পর্কে।
বাংলাদেশ আনসার মোট ৩টি ইউনিটে বিভক্ত।
- ব্যাটালিয়ন আনসার।
- সাধারণ আনসার।
- ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি বা ভিডিপি।
এই বাহিনীর মোট সদস্য ৫৭ লাখ, এর মধ্যে মাত্র ১৭হাজার ব্যাটালিয়ন আনসার বাকিরা সাধারণ আনসার ও ভিডিপি। এই ১৭ হাজার আনসার সদস্য প্যারামিলিটারি ফোর্সের অংশ হিসেবে এরা পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েন আছে। এবং সেখানে আর্মি আর বিজিবির সাথে কাজ করে।
সাধারণ আনসার পুলিশ বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে। অন্যদিকে ভিডিপির সদস্যরা গ্রামগুলোয় মোতায়েন থাকে সেখানে এ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য।
কিন্তু অনেকেই দাবি করেন যে আমাদের সব আনসার সদস্যদের মিলিটারি ট্রেনিং দেওয়া উচিত বা ব্যাটালিয়ন আনসারের সংখ্যা বাড়ানো উচিত আরো কয়েকগুণ। এক সময় আমারও এই একই কথা মনে হত। তাই পরিচিত কয়েকজন আর্মি অফিসার ও একজন পুলিশ অফিসার কে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। আর তাদের দেওয়া উত্তরই আমি আজ পরিমার্জিত ভাবে তুলে ধরলাম।
প্রথমেই বলতে হয় যে সব আনসার সদস্যদের মিলিটারি ট্রেনিং দিলে তাদের অস্ত্রশস্ত্রও মিলিটারির মত দিতে হবে। আর তা নাহলে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ তার সময়ে এই কাজ করছিল আর যার ফলে ১৯৯২ সালে সারাদেশে একযোগে আনসাররা বিদ্রোহ করেছিলো।
আর সব আনসার সদস্যদের মিলিটারি ওয়েপন দেওয়া আত্মহত্যার সমান। কারণ এই ৬১লাখের বাহিনী তখন দেশের সেনাবাহিনীর থেকে শক্তিশালী হয়ে যাবে আর তারা সব ক্যান্টনমেন্ট দখলের চেষ্টা করবে, ফলে দেশে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হবে।
তাহলে বলতে পারেন যে, সেনাবাহিনীর সাথে একটা ব্যালেন্স রেখে ব্যাটালিয়ন আনসারের সদস্য বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। আমাদের দেশ খুব একটা বড় না। আর সীমানা পাহারাসহ অন্যান্য যেসব কাজে প্যারামিলিটারি লাগে সেসব কাজের জন্য যথেষ্ট প্যারামিলিটারি আছে। তাই নতুন এইসব সদস্যদের কোথায় মোতায়েন করা হবে এটা নিয়েও একটা ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে।
আর যদি এদের সাধারণভাবে মোতায়েন করা হয় তাহলে তা মারাত্মক হবে। কারণ মিলিটারি ট্রেনিং আর সাধারণ পুলিশ ট্রেনিং এর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। মিলিটারির মূলমন্ত্র শত্রুকে খতম করা, সেখানে পুলিশের মুলমন্ত্র সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা। কিন্তু এই বাহিনীকে মিলিটারির আদলে গড়লে অনেক অসুবিধা হবে।
উদাহরণ স্বরুপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মিলিটারাইজেশনের মূল্য চুকাতে হচ্ছে বর্তমানে আমেরিকাকে। আমেরিকান আর্মি প্রতিদিনই আপডেট হচ্ছে আর এই আপগ্রেড করার ফলে তাদের পুরাতন সরঞ্জাম পুলিশকে দেওয়া হয়। আর সেখান থেকেই বিপত্তি শুরু হয়।
আজ আমেরিকান অস্ত্রনির্মাতা কোম্পানি গুলোর সবথেকে বড় এপিসিতে বহনযোগ্য এলএমজির কাস্টমার তাদের বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ। আর এইসব অস্ত্রের জন্য ৩ধরণের বুলেট তারা তৈরি করছে রিয়েল রাউন্ড, রাবার শেল আর পেপার বা কেমিক্যাল শেল। আর এগুলা ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের দেশের সাধারণ মানুষ আর আন্দোলনকারীদের উপর। যার ফলে আহত আর নিহতের সংখ্যা বাড়ছে।
যাইহোক নব্বইয়ের দশকে আমেরিকা লসএঞ্জেলস শহরে বিরাট দাঙ্গা বাদে আর সেই সময় সেখানকার পুলিশ তা ভালভাবেই দমন করে। আর এখন সামান্য প্রটেস্টেও সেই সময়ের থেকে বেশি মানুষ আহত হয়। এর কারন হিসেবে তখনকার বহু পুলিশ অফিসার মনে করেন যে এখনকার আমেরিকান জনবান্ধব পুলিশের থেকে আর্মিতে পরিণত হয়েছে।
তাই বলতে চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মিলিটারিতে পরিণত করার মানে হল আসামি গ্রেফতার থেকে বেশি আসামির মৃত্যু হবে, সামান্য আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আহত হবে প্রচুর মানুষ। তাইবলে এই নয় যে কোন স্পেশাল ফোর্স থাকবে না, বরং বিভিন্ন হামলা মোকাবিলার জন্য আমাদের স্পেশাল ইউনিট রাখতে হবে। আর আমাদের প্রত্যেক জেলায় পুলিশ ও র্যাবের স্পেশাল ফোর্স আছে যারা সোয়াট, সিটিএস ইত্যাদি নামে পরিচিত।
আর সবশেষ এইটুকু বলতে চাই যে আমাদের আনসার বাহিনী কে এমন ভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি তৈরি হলে তারা মাত্র ৭-১০দিনের ট্রেনিং করে যুদ্ধে যেতে পারবে কারণ তারা অস্ত্র পরিচালনা বহু আগে থেকেই পারে। শুধু রণকৌশলের ট্রেনিং তাদের দিলেই হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ এখানে শুধু সামরিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যাখা করা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যাখ্যা করা হয়নি।
Leave a Reply