সিয়াচেন হলো বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং উঁচু যুদ্ধক্ষেত্রটির নাম। এটি একটি হিমবাহ। হিমালয় পর্বতের ঠিক পূর্ব দিকে অবস্থিত কারাকোরাম পর্বতমালা। ৩৫.৫ ডিগ্রি উত্তর এবং ৭৭ ডিগ্রি পূর্ব অক্ষাংশে এবং ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখার ঠিক পূর্বদিকেই সিয়াচেন হিমবাহ’র অবস্থান।

পর্বতারোহীদের মত ঊর্ধ্বে গমনরত একদল সৈনিক
এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অমেরু প্রদেশ। মেরু অঞ্চলের বাইরে সবচেয়ে ঠাণ্ডা থাকে এই সিয়াচেনে। এর স্বাভাবিক গড় তাপমাত্রা -১৫ ডিগ্রী! আর শীতকালে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা -৫০ ছাড়িয়ে যায়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬ কিলোমিটার। হিমবাহটি বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান এর নিয়ন্ত্রণাধীন। সম্প্রতি ভারত এখানেই নির্মাণ করেছে পৃথিবীর উচ্চতম হেলিপ্যাড।

ভারতের তৈরি পৃথিবীর উচ্চতম হেলিপ্যাড
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই হিমবাহ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২১ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এটাই পৃথিবীর সর্বোচ্চতম যুদ্ধক্ষেত্র। এই হিমবাহ নিয়ে আছে অসংখ্য কাহিনী। এর কোনো কোনো টি এতই বেদনার, যা শুনলে মন কষ্টে ভরে ওঠে। আগে এই স্থানটিই উভয় দেশের সশস্ত্রবাহিনীর প্রশিক্ষণস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্ত যুদ্ধের চেয়ে ঠাণ্ডা ও প্রতিকুল পরিবেশের জন্য মারা যেত অসংখ্য সৈন্য।

বরফ ধসের পর হারানো সেনা দের উদ্ধারকার্যে ব্যস্ত একদল সৈনিক
এই স্থানটি নিয়েই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চলে আসছে ১৩ এপ্রিল ১৯৮৪ সাল থেকে। তখন থেকে এখানে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায়ই কামান-মর্টারের গোলা বিনিময় হয়। এ গোলা বিনিময়ে উভয়পক্ষের যত না হতাহত হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মারা গেছে তুষারাঘাতে। ১৯৮৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মতো সৈন্য এখানে মৃত্যুবরণ করেছে যার ৯৫ ভাগই মারা গেছে প্রতিকুল পরিবেশের কারণে !

বরফ ধ্বস এর একাংশ
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে যখন পাকিস্তানের ১২৪ জন সেনা ও ১১ জন নাগরিক ধ্বসে চাপা পড়ে এই এলাকায় মারা গিয়েছিল, ও ২০১৩ সালে ১৫২ জন ভারতীয় সেনা তুষার ধ্বসে মারা যায়, তখন দুই দেশ নতুন করে আবার হিমবাহ থেকে সেনা অপসরণের কথা বলা শুরু করেছিল। কিন্তু সেই আলোচনা কোন ফল ছাড়াই শেষ হয়েছে।

নামাজরত অবস্থায় পাকিস্তানের কিছু সৈন্য
সামরিক বাহিনীর দপ্তরে বলা হয়েছে স্ট্র্যাটেজিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের উপরে দখল বজায় রাখার জরুরীত্ব নিয়েই রাজনীতিবিদরা ঘোষণা করেছেন যে, সিয়াচেন নিয়ে প্রশ্ন কাশ্মীরের সমস্ত সমস্যার সমাধান না করে আলাদা করে করা সম্ভবপর নয়, কিন্তু ভারত ও পাকিস্তানের লোকরা একই প্রশ্ন তুলছেন; কেন, আর কিসের জন্য বহু সহস্র সেনা প্রাণ দিয়েছেন? প্রসঙ্গত, এদের মধ্যে বেশীর ভাগই মারা গিয়েছেন যুদ্ধে নয়, বরফ ধ্বসে চাপা পড়ে, গভীর খাদে পড়ে গিয়ে, ঠাণ্ডায় জমে নয়তো অক্সিজেনের অভাবে।

সিয়াচেনে পাকিস্তানের অংশ
দুই দেশেরই সমাজে পর্বতারোহী, পরিবেশ বিশারদ, সামাজিক কর্মীরা দুই দেশের সরকারকে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই যুদ্ধক্ষেত্রটিকে পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যান বানানোর জন্য আহ্বান করেছেন। কারণ, বিশ্বের উঁচু পাহাড়ি যুদ্ধ ক্ষেত্র এর চেয়ে উঁচু পাহাড়ি উদ্যান কথাটা শুনতে অনেক ভাল লাগে।

সিয়াচেন এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
Leave a Reply