এটি আসলে তালেবানের স্পেশাল কমান্ডো ফোর্স যা তৈরি করা হয়েছে উন্নত দেশগুলির কমান্ডোদের আদলে। এদের আরেক নাম হচ্ছে গুপ্ত ঘাতক। আফগানিস্তানে এখন আফগান সেনা, পুলিশ ও বিদেশী বাহিনীর কাছে আতংকের আরেক নাম হল ‘রেড ইউনিট’।

এদের সদস্য সংখ্যা অজানা কিন্ত ধারণা করা হয় ৩০০ জনের বেশী বা এর কাছাকাছি। এই বাহিনীর হামলায় সবচেয়ে বেশী হতাহত হয়েছে আফগান পুলিশ এর পরেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাছাড়া এদের আলাদা বৈশিষ্ট্য হলে এরা সুইসাইড হামলা করে না। সেনা ক্যাম্প ও নিরাপত্তা বাহিনীর টার্গেট করা যায়গায় হামলা করেই পালিয়ে যায়। এই বাহিনীর আরেক বৈশিষ্ট্য হল সরকার ও মার্কিন সমর্থনকারী সরকারী লোকদের বাড়িতে বা বাইরে গুপ্ত হত্যা করা। ২০১৬ সালের প্রথমদিকে এই বাহিনী তৈরি করা হয় বলে অনুমান করা হয়।

এরা অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করে। অত্যাধুনিক পশ্চিমা অটোম্যাটিক রাইফেল, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, অত্যাধুনিক গ্রেনেড, স্মোক গ্রেনেড, সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল, রাশিয়ায় তৈরি নাইট ভিশন গগলস, বুলেটপ্রুফ অত্যাধুনিক হেলমেট, অত্যাধুনিক ম্যাপ, শক্তিশালী জ্যামার, ৮২ এমএম রকেট, আরপিজি ৩০, রুশ ও পশ্চিমা ভারী মেশিনগান, রাইফেলের সঙ্গে যুক্ত করা আছে লেজার। লেজারের নিখুঁত নিশানায় ইতিমধ্যে বহু আফগান পুলিশ, সেনা ও অনেক মার্কিন সেনা প্রাণ হারিয়েছে। তাছাড়া আছে পশ্চিমা দেশের তৈরি স্নাইপার রাইফেল। এই বাহিনীর সব সদস্যই কেউ তালেবানের পোশাক ব্যবহার করেনা। এরা সম্পূর্ণ মিলিটারি ও আধুনিক গিয়ার ব্যবহার করায় এদের দেখলে এরা সরাকারি বাহিনীর কমান্ডো না বাইরের কেউ তা চিহ্নিত করা যায় না।

দ্রুত পালিয়ে যাবার জন্য ব্যবহার করে জাপানী ব্র্যান্ডের বেশী সিসির গতি সম্পন্ন গাড়ি। যা কেবল অপারেশনের সময়ই তাঁরা ব্যবহার করে।

আফগান সেনার ভাষ্য এরা এত দ্রুত পালিয়ে যায় ফলে এদের ধরা অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে গেছে।

রেড ইউনিট নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হচ্ছে। তাদের সামরিক কৌশল নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের পর্যন্ত ভাবিয়ে তুলেছে। রেড ইউনিটকে উন্নত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটি দক্ষ ঘাতক বাহিনী হিসেবে বর্ণনা করেছে রয়টার্স ও দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস।

সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানের হামলার ধরন দেখে আফগান কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে, এরা সরকারি বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের চেয়ে অধিকতর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এমনকি তারা সেনা বা পুলিশের গাড়ি চুরি করে তা হামলার কাজে লাগাচ্ছে। তালেবানের সঙ্গে পুলিশ সেনারা পেরে উঠছে না। কারণ, পুলিশের অস্ত্রশস্ত্র ততটা আধুনিক নয়।

রেড ইউনিটের অস্ত্রশস্ত্র বিশ্লেষণ করে আফগানিস্তানের সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, এগুলো যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, বেলজিয়াম, রাশিয়া, ইরান ও পাকিস্তানে তৈরি। পশ্চিমা দেশের উন্নত অস্ত্রশস্ত্রগুলো পাকিস্তানের কালোবাজার থেকে সংগ্রহ করে থাকতে পারে তালেবান। আবার যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত আফগান সেনাদের কাছ থেকেও তারা তা নিতে পারে।

রেড ইউনিটের আধুনিক সমরাস্ত্রের উৎস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাদের সন্দেহের তির রাশিয়া ও ইরানের দিকে। পাশাপাশি তালেবানের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পাকিস্তানের নাম তো অনেক আগে থেকেই বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

রেড ইউনিট যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, তা টের পাওয়া যায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের কথাবার্তায়। ফারাহ প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্য দাদুল্লাহ কানি বলেন, ‘পরিস্থিতি শোচনীয়। তালেবান পুরো প্রদেশ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের হাতে আছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র।’

কান্দাহার প্রদেশের গভর্নরের মুখপাত্র কুদরতুল্লাহ খুশবাকত বলেন, যুদ্ধে তালেবান এখন ভিন্ন আধুনিক কৌশল ব্যবহার করছে। তাদের নিজস্ব ভ্রাম্যমাণ বিশেষ ইউনিট আছে। এই ইউনিটের হাতে রয়েছে লেজার ও নাইট ভিশন প্রযুক্তি। এ দিয়ে তারা রাতের অন্ধকারে দেখতে পায়। তারা হুটহাট তল্লাশিকেন্দ্র ও ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছে। বিমান হামলা এড়াতে মুহূর্তের মধ্যে দ্রুত গতির গাড়িতে করে এলাকা ছাড়ছে।

হামলার ক্ষেত্রে রেড ইউনিটের নাইট ভিশনসহ বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার প্রসঙ্গে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল দৌলত ওয়াজিরি। তিনি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘শত্রুরা আমাদের রাতে দেখতে পারছে। কিন্তু আমরা তাদের দেখতে পারছি না।’ তাদের স্নাইপার আমাদের দিকে তাক করা।

আফগানিস্তানে তালেবান বিদ্রোহীরা অনেক দিন ধরে আধিপত্য ছড়ানো ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান ঘটেছে। আইএসের আবির্ভাবে আফগানিস্তানে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তালেবান আধিপত্য। তালেবান হল তীব্র আইএস বিরোধী। চলতি বছরই ৮৯ জন আইএস জঙ্গিকে গুলি করে প্রকাশ্য হত্যা করে তালেবান। বিশ্লেষকদের ধারণা, আফগান, মার্কিন সেনাবাহিনী ও আইএস-উভয় প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতেই তালেবান বিশেষ ইউনিট গঠন করেছে।

তালেবান এলিট রেড বাহিনীর প্রতাপ ও আইএসের প্রভাব বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা বাড়ানোর বিষয়ে মাস কয়েক আগে ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সূত্র- প্রথম আলো, ইন্টারনেট ও সংযোজিত

Facebook Comments

comments