১৯৬৪ সালে মার্কিন বিশ্বখ্যাত গাড়ি কোম্পানি ফোর্ড তাদের নতুন এক ধরণের ভি৬/ভি৮ ইঞ্জিনের দ্রুত গতির গাড়ি তৈরি করে। গাড়িগুলি স্পোর্টস কার ও এদের সিসি ছিল সর্বনিম্ন ৭৭৯৩ থেকে ১১০০০+ পর্যন্ত।

ভি৬/ভি৮ ইঞ্জিনের কারণে এই সিরিজের গাড়িগুলি প্রচুর ফুয়েল কনজিউম করতো। ফোর্ড এর দেখাদেখি মার্কিন জেনারেল ও আরও পশ্চিমা গাড়ি কোম্পানিগুলি ব্যাপকভাবে এই সিরিজের তেলের খাদক গাড়ি তৈরি করতে থাকে। কারণ এই মডেলের গাড়ি গুলি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল এর গতি আর পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে আমেরিকায় তেলের দাম অনেক কম।

ফলে হু হু করে এই গাড়ির বিক্রি বেড়ে চলছিল। একটা সময় এমন অবস্থা হয় টোটাল গাড়ির মার্কেটের প্রায় ৫০ ভাগের বেশী দখল করলো এই তেলখাদক মডেলগুলি। কিন্ত প্রেক্ষাপট বদলে গেল যখন আরব ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হল ১৯৭৩ সালে। যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিমাবিশ্ব বরাবরের মতই ইসরাইলের পক্ষ নিল। ইসরাইলকে সিরিয়ার গোলান থেকে সরে যাবার আল্টিমেটাম দেয় সৌদি আরব কিন্ত পশ্চিমা বিশ্ব সৌদি আরবের কথা কেয়ার করলে তো। তখন ক্ষমতায় ছিলেন বাদশাহ ফয়সাল।

তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে শিক্ষা দিতে তেলের উপর এক ভয়ানক অবরোধ দেন কারণ তেলের নিয়ন্ত্রণগুলি করতেন সৌদি সরকার। তেলের উত্তোলন একবারে কমিয়ে দেন। ফলে সারা বিশ্বে এক ভয়ানক অবস্থার তৈরি হয়। পশ্চিমা বিশ্ব মনে করেছিল তেলের অবরোধ অল্পদিনেই উঠে যাবে কিন্ত বাদশাহ ফয়সাল ছিলেন একরোখা মানুষ। তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। সৌদি আরবের সাথে আরও কিছু তেল উৎপাদনকারী দেশ যোগ দেওয়ায় অবস্থা আরও খারাপ হয়।

দীর্ঘমেয়াদের তেলের অবরোধ দেওয়ায় শিল্প কারখানা গুলি উৎপাদন বন্ধ রেখে বিপুল লোকসানে পরে যায়। পরিবহণ সিস্টেম প্রায় অচল হয়ে পরে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশী লোকসানে পরে বড় বড় গাড়ি কোম্পানি গুলি বিশাল প্রভাবে তেলের বাজার ২ ডলার থেকে তখন ১২০ ডলার ক্রসিং করেছিল !

ফলে ভি৬/ভি৮ ইঞ্জিনের গাড়ি নিয়ে একদিকে পাবলিক সমস্যায় পরে অপরদিকে কোম্পানিগুলি আগে তৈরি করে রাখা ও অর্ডার দেওয়া গাড়ি নিয়ে সমস্যায় পরে ! অবস্থা এমন যে মানুষ গাড়ি কেনা ও গাড়ি বিক্রির পরিমাণ প্রায় শূন্য এর যায়গায় নেমে আসে ! এতে ইংল্যান্ড এর বিখ্যাত বেডফোর্ড কোম্পানি দেওলিয়া হয়ে যায়। জার্মান গাড়ি শিল্পগুলি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয় ও মার্কিন জেনারেল ও ফোর্ড গাড়ি কোম্পানিকে সরকার পরবর্তী সময়ে বিশাল পরিমাণ ঋণ দিয়ে দেওলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে হয়।

বিশাল এই তেলের অবরোধের পরে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলি সুর নরম করে ইজরাইলের পক্ষ ত্যাগ করতে থাকে !  আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন নিজ দেশের সিনেটে তুলাধুনা হলেন একপক্ষীয় ভাবে ইসরাইলের পক্ষে যাওয়ায় ! রিচার্ড নিক্সন নিজে বাদশাহ ফয়সালের সাথে দেখা করে সমস্যার সমাধান করতে চাইলেন। বাদশাহ ফয়সাল তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় সমস্যা আরও বারে ফলে বাধ্য হয়ে ইসরাইল তার দখলকৃত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেয় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে।

তেল অবরোধের পরে সারা বিশ্বের গাড়ি কোম্পানিগুলি নতুন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় ফলে তারা এত বেশী সিসির গাড়ি তৈরি থেকে বেড়িয়ে আসে ও জ্বালানী সাশ্রয়ী কম সিসির গাড়ির তৈরির প্রতি বেশী নজর দেয়।

উল্লেখ্য সেই সময় জাপানের গাড়ি শিল্প প্রচুর মুনাফা করে। কারণ জাপান কম সিসির গাড়ি বানাত এতে জাপানী কোম্পানি গুলি পশ্চিমা দেশে স্থায়ী আসন করে নেয় যা এখনো আছে।

 

পশ্চিমা বিশ্বগুলির অনেক দেশই এক তরফা ইসরাইলের পক্ষ ত্যাগ করে যা এখনো বিদ্যমান বর্তমানে জেরুজালেম ইস্যু নিয়েই হয়তো দেখেছেন। পশ্চিমা বিশ্বের একমাত্র আমেরিকা বাদে সবাই জেরুজালেম ইস্যুতে ইজরাইল বিরোধী ভোট দিয়েছে। এমনকি তেল অবরোধ দেওয়ার ফলে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশে ইহুদী বিদ্বেষ অনেক বেড়ে যায় ! জনগণের দাবী ছিল ইজরাইলের ভাগ্য ওরা নির্ধারণ করবে ওদের জন্য আমাদের কেন বিপদে পরতে হবে !

তৎকালীন সময়ে বিশ্বের বহুদেশে ইজরাইল বিরোধী বিক্ষোভ হয়। নতুন করে আবার সামনে আসে পশ্চিমা বিশ্ব ইহুদীদের এজেন্টা বাস্তবায়ন করছে নিজ দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে।

 

ছবিতে তেলের সংকট নিয়ে আমেরিকায় সেই সময়ের ছবি,

Facebook Comments

comments