মিগ-৩১ এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত না হওয়া একটি বিমান। এই বিমানের ব্যবহারকারী আগে একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকলেও সোভিয়েত ভেঙ্গে গেলে কাজাখাস্থান উত্তরাধিকার সূত্রে ৪০ টির মতন পায়।
১৯৮৫ সালে গোয়েন্দা কাজে নিযুক্ত মার্কিন গোয়েন্দা বিমান ব্ল্যাকবার্ড কে ধাওয়া করার সময় মিগ-৩১ সোভিয়েত এয়ার এরিয়া ক্রস করে নরওয়ের ব্যারেন্টস সি এরিয়ায় প্রবেশ করলে মিগ-৩১ এর প্রথম ছবি তুলে নরওয়ের এক পাইলট। সেই পাইলটের মাধ্যমে প্রথম সারা বিশ্ব মিগ-৩১ কে দেখতে পায়। কিন্ত প্রায় ৭০ হাজার ফুট উপর দিয়ে চলা মিগ-৩১ কে তখন ন্যাটো রাডার ডিটেক্ট করতে পারেনি।

ছবিতে এসআর-৭১ ব্লাকবার্ড
মিগ-৩১ এর প্রডাশন লাইন সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে বন্ধ যা এখনো চালু করা যায়নি। তবে ২০০০ সালে সিরিয়া রাশিয়ার কাছে ২ স্কোয়াড্রন মানে ৪০ টি মিগ-৩১ বিমান সরবরাহ করতে অনুরোধ করেছিল। ফলে রাশিয়া তাঁর বহরে থাকা পুরাতন ৪০ টি বিমান সিরিয়ার কাছে বিক্রির জন্য বিল পাশ করে।
সিরিয়ার এই বিমান কেনার কারণ ছিল নিরাপত্তা ইস্যু; মূলত ইসরাইলী বিমানের অনুপ্রবেশ এই বিমান কেনায় বাধ্য করে। কিন্ত পরে ইসরাইল সেই অর্ডার ঠেকায় মরিয়া হয়ে উঠে সিরিয়াকে হুমকি দেয়। আর তাই আমেরিকার অবরোধের হুমকিতে জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞায় এই বিমান সিরিয়া আর কিনতে পারেনি।
একনজরে বিবরণঃ
- ভূমিকা: ইন্টারসেপ্টর এয়ারক্রাফট।
- ওরিজিন: সোভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমান রাশিয়া।
- প্রস্তুতকারী: মিকোয়ান গুরেভিচ।
- দৈর্ঘ্য: ২১.৫ মিটার।
- স্প্যান: ১৪ মিটার।
- উচ্চতা: ৬.৬ মিটার।
- উইং স্প্যান: ১৪.০২ মিটার।
- উইং এরিয়া: ৬১.৪১ স্কয়ার মিটার।
- পাওয়ার প্লান্ট: ২ টি আর-১৫ বিডি-৩০০ আফটার বার্নিং টার্বোজেট। এগুলো প্রতিটি সাধারণত 93.19 kN থ্রাস্ট নির্গত করে থাকে।
- সর্বোচ্চ গতি: ম্যাক ২.৮৩
- খালি অবস্থায় ওজন: ২২,০০০ কিলোগ্রাম।
- ফুল লোডেড অবস্থায়: ৩৬,৭২০ কিলোগ্রাম।
- সর্বোচ্চ টেক অফ ওজন: ৪৬,২০০ কিলোগ্রাম।
- সার্ভিস সিলিং: ৬৭,২০০ ফুট।
- ক্রু: ২ জন।
- ফেরি রেঞ্জ: ৩০০০ কিলোমিটার।
- সুপারসনিক ইন্টারসেপ্ট রেঞ্জ: ৭২০ কিলোমিটার।
- সাবসনিক ইন্টারসেপ্ট রেঞ্জ: ২২০০ কিলোমিটার।
- টেক অফ স্পীড: ১২০০ কিলোমিটার/ঘন্টা।
- ল্যান্ডিং স্পীড: ৮০০ কিলোমিটার/ঘন্টা।
- ইন্টারনাল জ্বালানি: ১৪২০০ কিলোগ্রাম।
- ড্রপ ট্যাংক: ১৬০০ কিলোগ্রাম জ্বালানি, যা এক্সট্রা ৯১ নটিক্যাল মাইল রেঞ্জ বৃদ্ধি করে দেয়।
- সেন্সরস: LD/SD TWS Radar, IRST, RWR
- ২৬০ রাউন্ড হেভি বুলেট সহ একটি ২৩মি.মি. ক্যানন।
- ৪ টি আর-৩৩, ২ টি আর-৪০টি অথবা ৪টি আর-৬০টি এয়ার টু এয়ার মিসাইল।
- এটি প্রয়োজনে কয়েকধরণের এয়ার টু এয়ার মিসাইল সাথে ল্যান্ড অ্যাটাক এবং এন্টিশিপ মিসাইল বহন করতে পারে।
মিগ-৩১ বিমানে পৃথিবীর সর্বপ্রথম এক্টিভ ফেসড এরে রাডার (Active Phased Array Radar) ব্যবহৃত হয়েছে যার নাম N007 Zaslon। এটি SBI-16 Zaslon (Flash Dance) নামেও পরিচিত এবং এটি পিছনের ককপিটের ওয়েপন সিস্টেম অফিসার দ্বারা পরিচালিত হয়। সেসময় এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে পাওয়ারফুল এয়ারবোর্ন রাডার এমনকি এখনও এটি দুর্দমনীয়।

Zaslon Radar
রাডারটি ১০০ কিমি এর বেশি দূর থেকে ০.১ স্কয়ার মিটার রাডার ক্রস সেকশন বিশিষ্ট টার্গেট লক করতে পারে এমনকি ০.০১ এর সমান রাডার ক্রস সেকশন ভ্যালুর টার্গেটকে ভার্টিক্যাল লক অন করতে পারতো ৬০ কিমি দূর থেকেই।
এর চেয়েও কম রাডার ক্রস সেকশন বিশিষ্ট টার্গেটকে ট্র্যাক করার জন্য আলদা ট্যাক্টিক্স ব্যাবহার করা হয় যা হল ৪ টি মিগ-৩১ দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ৪ ধরণের ফ্রিকুয়েন্সিতে একই এরিয়া আলাদা আলাদা দিক দিয়ে সার্চ করা হয়। আমরা জানি স্টেলথ ফাইটার চারিদিক দিয়ে সমান স্টেলথি নয় বিশেষ করে পেছন দিকে, ফলে যে মিগ-৩১ আগে ট্র্যাক করতে পারে সে তাতক্ষণিকভাবে অন্যান্য মিগকে লোকেশন দিয়ে দেয় স্টেলথ ফাইটারের।
তাহলে বুঝতেই পারছেন কে রাশিয়ার আকাশের আসল রক্ষক। হয়ত এই কারণেই পশ্চিমারা মিগ-৩১ অন্যান্য দেশকে এক্সপোর্টে বাধা প্রদান করে।
কিছু ছবিঃ
Leave a Reply