ইউ-২ হচ্ছে আমেরিকার তৈরি একটি সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিশিষ্ট স্পাই প্লেন। যেটি Dragon Lady নামেও বেশ পরিচিত। ১৯৬৪ সালে সর্বপ্রথম এটি জনসম্মুখে প্রদর্শনের জন্য আনা হয়। এটি ছিল আল্ট্রা হাই-অল্টিটিউড রিকনিসেন্স বিমান যার মূল কাজ ছিলো গুপ্তচরবৃত্তি৷ অর্থাৎ শত্রু দেশের আকাশে ঢুকে এটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিরাপদে বেরিয়ে যেত।
এর বেগ কম হওয়ায় এর মূল হাতিয়ার ছিল তার মাত্রাতিরিক্ত সার্ভিস সিলিং। এটি অবিশ্বাস্য রকমের ৯০,০০০ ফুট উচু দিয়েও উড়তে সক্ষম ছিলো৷ এত উচ্চতায় ওড়ার সময় এর পাইলটকে প্রেশার স্যুট পড়তে হতো যার সাথে মহাকাশচারিদের পোশাকের সাদৃশ্য ছিল৷

U2 বিমানের পাইলটের স্পেশাল স্যুট

U2 বিমানের পাইলটের স্পেশাল স্যুট
উচুতে ওড়ার সক্ষমতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর ডানার বিস্তার৷ ৬৩ ফুট লম্বা বিমানে ডানার বিস্তার ছিল ১০৪ ফুটের মত৷ ওজনও রাখা হয়েছিল তুলনামূলক কম৷ খালি অবস্থায় ওজন ছিল প্রায় ৬৫০০ কেজি ও এতে ছিলো সিঙ্গেল ইঞ্জিন৷
ইউ-২ বিমানের তৎকালিন যে কোন সোভিয়েত বিমান থেকে ১৫-২০ হাজার ফুট উচুতে ওড়ার ক্ষমতা ছিল৷ এমনকি বলা হয় যে একবার সোভিয়েত ইউনিয়নের ৫৭ টি বিমান ইউ-২ কে ইন্টারসেপ্ট করতে পাঠানো হলেও ইউ-২ কে ইন্টারসেপ্ট করতে ব্যর্থ হয়৷
এই বিমান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিউবার মিসাইল, কুয়েতে ইরাকের ট্যাংক ও সাইবেরিয়াতে রাশিয়ান বিমানের ছবি তোলে। এমনকি সোভিয়েতের Tyuratam মিসাইল টেস্ট সেন্টার থেকে R-7 মিসাইল লঞ্চ প্যাড এর ফুটেজ ও সার্ভিসে আনা তৎকালিন নতুন বোমারু বিমান Myasishchev M-4 এর ছবিও ইউ-২ তুলে নিয়ে আসে।

U2 দিয়ে তোলা সোভিয়েতের R-7 মিসাইল লঞ্চ প্যাড এর ছবি
ছবি তোলার জন্য ইউ-২ বিমান ৭০০ পাউন্ডের হাইটেক ও লেটেস্ট ফটোগ্রাফিক ইকুইপমেন্ট সাথে নিয়ে যেতো৷ তবে এর সমস্যা ছিলো ল্যান্ডিং৷ এর ল্যান্ডিং গিয়ার ছিলো বাইসাইকেলের মত৷ অর্থাৎ সামনে পিছনে কেবল দুটি চাকা৷ তাই সবর্দা রানওয়েতে একজন সহকারিকে গাড়ি নিয়ে বিমানের পাশে ছুটতে হতো উচ্চতা ও রানওয়ে এলাইনমেন্ট সম্পর্কে ধারনা দিতে৷
এপর্যন্ত দুটি ইউ-২ বিমান শ্যুট ডাউন হয়েছে৷ যাতে একজন পাইলটকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয় সোভিয়েত সরকার৷ তবে কারাদন্ড দেওয়ার ২ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে আটককৃত সোভিয়েত স্পাই এর বিনিময়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়৷

ছবিতে আমেরিকায় ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্রাশকৃত একটি U2 বিমান
ইউএস এয়ারফোর্স কিংবা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ই নয়, বরং মহাকাশ গবেষণাকারী সংস্থা নাসা ও এ বিমানটি ব্যবহার করে বায়ুমন্ডলের রাসায়নিক উপাদান নিয়ে গবেষণা, বায়ুমন্ডলীয় গতিবিদ্যা ও বছরের বিভিন্ন সময়ে সমুদ্র সংক্রান্ত পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষনার জন্য৷ নাসার জন্য বানানো U-2 এর ভ্যারিয়েন্টের নাম ER-2৷
যদি সাভির্সে থাকার সময়ের দিক দিয়ে পরিমাপ করা হয় তবে U-2 হবে অন্যতম সফল একটি বিমান৷ কারন হাতে গোনা খুব কম বিমানই আছে যা ৫০ এরও বেশি বছর ধরে কোন দেশের বিমানবাহিনীতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
Leave a Reply