সুইজারল্যান্ডকে হিটলার ব্যাকআপ হিসেবে রেখেছিলো। হিটলারের আগ্রাসনের কারণে গুটি কয়েক দেশ ছাড়া সবাই জার্মানির সাথে সম্পর্ক বাতিল করে। হিটলার তখন সুইজারল্যান্ডকে মিডেলম্যান হিসেবে ব্যবহার করে। জার্মান বিজনেসম্যানরা সুইজারল্যান্ডকে ভায়া করে লেনদেন চালাতে শুরু করে।

ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি। ধরুন, আপনার হাতে ১০ কেজি স্বর্ণ আছে। তো আপনি ভারত থেকে কিছু জিনিস কিনতে চান। কিন্তু ভারতের সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ। আর সরাসরি সোনা বা টাকায় লেনদেনও করতে পারবেন না। তখন আপনি সুইজারল্যান্ডে ১০ কেজি স্বর্ণ জমা রাখলেন। টাকা জমা করলেন। এবার সুইস ফ্রাঙ্কে (সুইজারল্যান্ডের কারেন্সি) তে সুইজারল্যান্ডের কোনো মিডেলম্যান মারফৎ ভারতের ব্যবসায়ীর সাথে লেনদেন করলেন। এই যা,  ঠিক এমনি করে বাংলাদেশ ইজরাইল থেকে সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে স্পাইক মিসাইল কিনেছিল।

এটা একটা দিক। আরো একটা দিক হল, হিটলার যদি in case, যুদ্ধে হারতে থাকে, তাহলে নাৎসিদের নিজেদের টাকা পয়সার হেফাজতের জন্যেও সুইজারল্যান্ড দরকার। অর্থাৎ সুইজারল্যান্ড দরকার সবার। মিত্রবাহিনী হোক, বা নাৎসি বাহিনী।

Switzerland is the safe Heaven of foreign money, after all.”

 

আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, ইহুদীরা তো সুইজারল্যান্ড যেতেই পারলোনা। তাহলে অর্থ রেখেছিলো কিভাবে?

উত্তর, সুইজারল্যান্ডে টাকা রাখার জন্য আপনার আসলে সুইজারল্যান্ড যাবার দরকার নেই। আপনি বাংলাদেশে বসেই কাজটি করতে পারেন। সেসব নিচে বলতেছি।
তো যা বলতেছিলাম।

হিটলার সুইজারল্যান্ডে লুটপাট করা সোনা দিতো। আর বিনিময়ে hard currency পেতো। যা দিয়ে অস্ত্র বানাতো বা কিনতো।

 

সুইজারল্যান্ড অনেক ছোট দেশ হলেও তারা ২য় বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের আর্থিক প্রয়োজনে অস্ত্র শিল্পে হাত দেয়। সুইজ নতুন গড়ে উঠা অস্ত্র কোম্পানিগুলোও হিটলারের কাছে অস্ত্র বেচতো আবার মিত্র বাহিনীর কাছেও বিক্রি করতো।

অর্থাৎ, সবদিক দিয়েই দুহাত ভরে কামাতে শুরু করে সুইজারল্যান্ডে।

আমেরিকা ব্রিটেন সবই বুঝতো। জানতো। তারা শেষে সুইস অস্ত্র ফ্যাক্টরিতে তারা বোমা বর্ষণ করতে চেয়েছিলো। যদিও শেষ মুহূর্তে বিরত থেকেছে সেই সুইস নিউট্রালিটির কারণে। আর দিনশেষে সুইজারল্যান্ডকে তো তাদেরও দরকার !!

 

মুলত ১৯৪৩ সালের বসন্তেই হিটলারের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন হাওয়াই মিলিয়ে যায়। সোভিয়েত বাহিনীর কাছে সলিল সমাধি হতে শুরু করে হিটলারের আর্মি ডিভিশনগুলো। হিটলারের একসময়ের স্ট্রাটেজিক্যাল মিত্র স্তালিন এবার তাঁর শত্রুতে পরিণত হল। যখন জার্মান রাশিয়ার কাছে হারা শুরু করে তখন হিটলারের একটা বড় ভয় ছিলো স্তালিনের হাতে হিউমিলিয়েট হবার।

 

তো, ১৯৪৩ সালের শেষদিকেই নাৎসিরা বুঝতে পারে তারা হেরে যাবে এবং জার্মানি দখল হয়ে যাবে। ফলে এবার রাইশ ব্যাংকের টাকা পয়সা তারা সরাতে শুরু করে সুইজারল্যান্ডে। থার্ড রাইটের পতন হলেও ফোর্থ রাইটের উত্থানের কথা তারা আগেই ভেবেছিলো। এবং ভবিষ্যৎ ফোর্থ রাইটের উত্থান যাতে সহজ হয়, সেইজন্য আগে থেকেই সুইস ব্যাংকে টাকা জমাতে শুরু করে নাৎসিরা।

১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ মার্কিন গোয়েন্দা দল এইসব লেনদেনগুলো ট্রেস করতে শুরু করে। শুরু হয়, Operation Safe Heaven

 

১৯৪৫ সালে নাৎসি বাহিনীর পতনের আগ পর্যন্ত ৬০ বিলিয়ন ডলারের লেনদেন ট্রেস করেছিলো মার্কিন আর ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। (ধারণা করাই যায় যে এটা মুল লেনদেনের একটা অংশ মাত্র)

ট্রেস করা ৬০ বিলিয়ন ডলারের একটা অংশ রাখা হয়েছিলো হিটলারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী Joachim Von Ribbentrop এর একাউন্টে। ১৯৪৬ সালে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চে সে বলেছিলো, “God protect Germany. God have mercy on my soul. My final wish is that Germany should recover her unity and that, for the sake of peace, there should be understanding between East and West. I wish peace to the world.”

 

৩০ জনেরও বেশি সুইস উকিল ব্যারেস্টারদের নাম ছিলো Operation Safe Heaven ডকুমেন্টসে। এসব সুইস উকিলের একাউন্টে নাৎসি অর্থ জমা ছিলো। (অর্থাৎ আপনি আপনার টাকা সুইজারল্যান্ডের কোনো বিশ্বস্ত বন্ধুকে দিলেন। সে তার নামে সুইস ব্যাংকে সেই টাকা জমা রাখলো। আপনার প্রয়োজনে তাকে বললে সে টাকা তুলে পাঠিয়ে দেবে। ব্যাপারটা এমন)

 

নুরেমবার্গে যখন নাৎসি বাহিনীর কুখ্যাত নেতাদের বিচার শুরু হয়, তখন এরা নিজেদের পক্ষে বড়বড় উকিল ব্যারেস্টার নিয়োগ দিয়েছিলো মুলত এই টাকার জোরে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে ফোর্থ রাইট গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা করে গিয়েছিলো নাৎসিরা তাদের পতনের ঠিক অন্তিমক্ষণে। নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্কে নাৎসি মতাদর্শ অনুসরনকারী ব্যবসায়ীদের নামে সুইসব্যাংকে টাকা জমা করা হয়েছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো নতুন জার্মানিতে গোপনে গোপনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পেক্স গড়ে তোলা হবে। ফোর্থ রাইটের ফাইনান্সিয়াল শক্তি বাড়ানো হবে। এরপর সময় সুযোগ মত আবার রাজনৈতিকভাবে মাথাতুলে দাঁড়াবে নাৎসিরা।

জার্মানরা আজো এই ফোর্থ রাইটের কথা ভুলেনি ও এই আশা ত্যাগ করেনি। তাদের বিশ্বাস জার্মানরা আবার এক সময় ফোর্থ রাইট করে বিশ্ব শাসন করবে। এই বিষয়গুলি গোয়েন্দাবাহিনী গুলি এখনো জানে তাই তারা এখনোও জার্মানকে বিশ্বাস করেনা ! কারণ মনে রাখবেন দুটি বিশ্ব যুদ্ধের কারণ কিন্ত এই জার্মানরা।

তাই জার্মানীর বড় রকমের অস্ত্র তৈরিতে এখনো নিষেধাজ্ঞা আছে।

 

সূত্র- ইন্টারনেট, বিভিন্ন ব্লগ ও নিজে সংযোজিত

Facebook Comments

comments