২০০ বছরে ইউরোপের একটি দেশ নিজেকে যুদ্ধ হানাহানি থেকে একেবারেই দূরে রেখেছে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হল, ইউরোপে যুদ্ধ হলেই এই দেশটি নানাভাবে গুটিবাজি করে লাভবান হয়।

আসুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনার আলোকেই দেশটির বিতর্কিত ভুমিকা আর গুটিবাজির কাহিনী বলি।

 

জার্মানিতে নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসার সাথেসাথেই হিটলারের বিরোধীরা, বিশেষ করে নাৎসি বাহিনীর মুল টার্গেট, ইহুদীরা ভয় পেতে শুরু করে। ইহুদীরা ছিলো অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।

তো তারা টাকা পয়সা জার্মানি থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করে ১৯৩৩ সালের পর থেকেই। এখন প্রশ্ন, টাকা সরিয়ে কোথায় রাখবে? বুঝতেই পারতেছেন কোথায় !

সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ সুইস ব্যাংকগুলোতে।
কেবল ইহুদীরাই নয়, হিটলারের বিরোধিতা করা দলগুলোও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে। বিশেষ করে যখন নাৎসি বাহিনী পূর্ণ কর্তৃত্ব নিতে শুরু করে জার্মানিতে।

একসময় আগ্রাসী নাৎসিরা ইহুদীদের ব্যবসা বানিজ্য প্রতিষ্ঠান জোর দখল করে নেয় এবং নিজেদের দলের ভেতর ভাগভাটোয়ারা শুরু করে। ইহুদীরা জীবন বাঁচাতে পানির দামে রাষ্ট্রের কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তুলে দিতে বাধ্য হয়। একে বলা হত, “Robbery on a massive Scale

লূই ডি রথচাইল্ডের মত ক্ষমতাধর ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও কেড়ে নেয় সরকার। ধনী ইহুদীরা জার্মানি ছাড়তে শুরু করে। ক্ষমতাধর ইহুদি ও নাৎসি বিরোধিরা তাদের জামানত বিদেশে সরিয়ে নিতে শুরু করে। এবং বড় অংশ রাখে সুইজারল্যান্ডে। কারণটা সবার জানা। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের কড়া গোপনীয়তা, নিরাপত্তা আইন। আপনি সুইস ব্যাংকে টাকা রাখবেন। আপনার একাউন্টে কোনো নামধাম খোঁজখবর তারা গোপন রাখবে। (এতে কিছু ঘাপলাও আছে। সেই ব্যাপারে পরে বলবো) বিষয়টি জটিল।

তো জার্মানির ধনী ইহুদিদের টাকা পয়সা জমা হতে থাকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে। আবার হিটলারের নাৎসি বাহিণীও টাকা জমানো শুরু করে সুইজারল্যান্ডে। কি? ঘোলাটে হয়ে গেলো ব্যাপারটা? Clear করতেছি।

১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়া দখল করে নেয়। (ভুলে যাবেন না, অস্ট্রিয়া কিন্তু হিটলারের জন্মভুমি। তার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিলো অস্ট্রিয়া আর জার্মানিকে এক করার) তো হিটলারের জার্মান বাহিণী অস্ট্রিয়া দখল করে বিনা বাধায়। অস্ট্রিয়া আর জার্মানি, দুই দেশের (কিন্তু একই জাতের) মানুষ খুশি হয় অস্ট্রিয়া ও জার্মানির একীভূতকরনে।

হিটলার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লিকুয়েডেট করে। ফলে ভিয়েনার সেন্ট্রাল ব্যাংকের যাবতীয় সম্পত্তি (অর্থাৎ সোনা আর টাকা পয়সা) সরিয়ে নেয়া হয় জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক Reichsbank (রাইশ ব্যাংক) এর ভল্টে। (অর্থাৎ একদেশ। সেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একটি হবে)

২০০ টনের বেশী সোনা আর বিলিয়ন ডলারের সমমুল্যের সম্পত্তি সরিয়ে নেয়া হয় ভিয়েনা থেকে জার্মানিতে।

অর্থাৎ বুঝতেই পারতেছেন, অস্ট্রিয়া জার্মানির একীভূতকরন হিটলারের জন্য কেবল পলিটিক্যাল সাফল্যই ছিলো না। এটা ছিলো নাৎসি জার্মানির জন্য আর্থিকভাবেও লাভজনক।

 

তো, লোভ এক ভয়ঙ্কর জিনিস।
সেইবছরের অক্টোবরেই চেকোস্লোভাকিয়ার সংখ্যালঘু জার্মানদের রক্ষাকরার অজুহাত দেখিয়ে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে নেয়। খুবই সহজে। চেক সরকার হিটলারের হাত থেকে তাদের asset বাঁচানোর জন্য চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগের সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে সোনা আর টাকা পয়সা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডে সরিয়ে নিতে শুরু করে। যদিও লাভ হয় নি। নাৎসিরা চেক সরকারকে চাপ দিয়ে আবার সব প্রাগে ফিরিয়ে আনে। সেখান থেকে যথারীতি সোনা আর অর্থের গন্তব্য হয় জার্মান সেন্ট্রাল ব্যাংকে। সেই আমলের ৬৬ মিলিয়ন ডলার মুল্যের সোনা ও অর্থ।

 

সূত্র- ইন্টারনেট, বিভিন্ন ব্লগ ও নিজে সংযোজিত

Facebook Comments

comments