ধূর্ত আমেরিকার চাপাবাজির গল্পঃ

আপনারা অনেকেই হয়ত ইউক্রেনে মালয়েশিয়ার ফ্লাইট ১৭ শূটডাউন এর কথা জানেন, কখনো কি জেনেছেন আমেরিকা তে সিভিলিয়ান প্লেন শুটডাউন এর কথা???

১৭ জুলাই ১৯৯৬ রাত ৮টা বেজে ১৯ মিনিট। জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্ট থেকে ট্রান্সএয়ার ফ্লাইট TWA 800 রোম এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। যাত্রার ১২ মিনিট পর ৮টা ৩১ মিনিটে প্লেনটি নিউ ইয়র্ক এর ইস্ট মরিচেস অঞ্চলে বিষ্ফোরিত হয় এবং ক্রাশ করে। ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক সাগরের মধ্যে ও বিস্তৃত হয়।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান বোয়িং ৭৪৭-১৩১, লন্ডন ১৯৮২

আটলান্টিকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ

ঘটনায় প্লেনের ২৩০ জন যাত্রী এবং ক্রু এর সলীল সমাধি হয়। কেসের তদন্ত বরাবরের মত NTSB কে দেয়া হয়। কিন্তু ইনভেস্টিগেশনের ৫ সপ্তাহ পরেও এর কুল কিনারা পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি FBI কেও তদন্ত দেওয়া হয় কারণ ওই বছর ২৫ জুন ইস্টার্ন সৌদি আরবে আমেরিকার মিলিটারি ফ্যাসিলিটি এর পাশে ট্রাক বম্বিং হয় যাতে ১৯ এয়ারফোর্স অফিসার মারা যান।

তাই ক্লিন্টন প্রশাসন ভেবেছিল অইটা টেরর এটাক। তখন FBI ঘোষণা করে যে তারা এর মধ্যে এক্সপ্লোসিভ ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে। কিন্তু এরপর দেখা যায় এগুলো ক্রাশ এর পর ফুয়েল ট্যাঙ্ক মাটিতে পরে বিষ্ফোরনের কারনে দাগ ছিল কোনো এক্সপ্লসিভ ছিলো না। তখন FBI ৭৫৫ জন প্রত্যক্ষদর্শির কাছে থেকে ঘটনার বিবরণ নেয় যা মার্কিন সরকার কে বিতর্কের মুখে ফেলে দেয়।

এদের মধ্যে প্রায় সবাই বলেন যে তারা প্লেন বিষ্ফোরনের আগে উজ্জ্বল কোনো বস্তু প্লেনে আঘাত করতে দেখেন, এবং ২৫৮ জন দাবি করেন তারা পরিষ্কার দেখেছেন যে ওটা মিসাইল ছিল।

এখন আসি এর আগের ঘটনায়। উক্ত ঘটনার কয়েকদিন আগে অই অঞ্চলে ইউএস নেভি তাদের মহড়া চালাচ্ছিল। ওই ঘটনার সময় তারা একটি বস্তুকে লক্ষ্য করে মিসাইল ও ফায়ার করেছিল তবে তারা বলেছে যে ওইটা TWA 800 ছিল না, কারন এটা তাদের মিসাইল রেঞ্জ এর বাইরে ছিল। কিন্তু ততদিনে মিডিয়া আর সাধারণ মানুষ খবর পেয়ে গেছে নেভি জড়িত থাকার বিষয়। তখন অনেক জায়গায় নেভি এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এতে চটে যান প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন। তিনি এই কেসের প্রতিটা কাগজ প্রথমে তার কাছে আসার নির্দেশ দেন।

তখন FBI ও NTSB এই সিদ্ধান্তে পৌছায় যে TWA 800 মিসাইল এর মাধ্যমে শুটডাউন হয়েছে ঠিক তখন মার্কিন সরকার তড়িঘড়ি করে এটাকে ফুয়েল ট্যাঙ্ক এ শর্টসার্কিট এর কারন দেখিয়ে কেস ক্লোজ করে দেয়।

এই ঘটনা নিয়ে অনেক লেখালেখি, বই, ডকুমেন্টারি বের হয়েছে। আপনারা চাইলে পরেও দেখতে পারেন। উক্ত ঘটনা নিয়ে লেখায় ওই সময় কয়েকজন লেখক কে Federal Conspiracy Charge এ গ্রেফতার করা হয়।

একটি ঘটনা, যার ৭৫৫ জন প্রমান, তারপরও আমেরিকা এটাকে চাপা দিয়ে দেয়। ২০১৩ সালে উক্ত কেসের অনেক তদন্তকারি এবং অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এই কেস রিওপেনের জন্য পিটিশন করেন যা অনুমোদন পায়নি।

ঘটনার ২২ বছর পর ও এটা একটি অমীমাংসিত ঘটনা। প্লেনটি কি আসলেই শুটডাউন হয়েছিলো?নাকি বোমা বিষ্ফোরনের কারনে হয়েছিল! নাকি অন্য কোনো কারন ছিলো আজও এর সমাধান হয়নি।

ভুল ত্রুটি সংশোধনযোগ্য। ধন্যবাদ

Boeing 747-131

Debris of Boeing 747-131

Debris of Boeing 747-131

Debris Engine of Boeing 747-131

 

 

লেখায়ঃ আসিফ মুস্তাফা ও নিজে সংযোজিত
তথ্যসুত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ডিস্কভারি সাইন্স, হিস্ট্রি টিভি ১৮,আর কিছু ব্লগ এবং ডকুমেন্টারি।

Facebook Comments

comments