ঘটনাটি ১৯৬৮ সালের ২১ জানুয়ারি। উত্তর কোরিয়ার অভিজাত কমান্ডো বাহিনীর বাছাই করা ৩১ জন সদস্যের একটি দলকে গোপনে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো হয় এক গুপ্ত মিশনে। তাদেরকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ব্লু হাউজে অনুপ্রবেশ করতে হবে এবং হত্যা করতে হবে দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং-হিকে।

দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট চুং হি পার্ক
কমান্ডো বাহিনী সীমান্ত পার হয়ে একেবারে রাজধানী সিউলে চলে আসে। তারপর তাঁরা দক্ষিণের রাজধানী সিউলের কাছাকাছি একটি পর্বতের জঙ্গলে যখন লুকিয়ে ছিল, তখন তাঁরা একদল ঘুরতে যাওয়া পর্যটকের চোখে পড়ে যান। কিন্তু কমান্ডোরা এই পর্যটকদের হত্যা করার বদলে, তাদেরকে কমিউনিজম নিয়ে একগাদা লেকচার দিল এবং কাউকে না বলার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে ছেড়ে দিল।

নর্থ কোরিয়ান কমান্ডোরা
এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল। ঐ পর্যটকগুলি তাদের সম্পর্কে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে জানিয়ে দেন। পুলিশ তাদের কথা অনুযায়ী সেখানে কাউকে খুঁজে পায়নি কিন্ত সেখানে তাদের ব্যবহার করা অনেক কিছু খুঁজে পেয়ে বুঝতে পারল পর্যটকের কথা মিথ্যা নয়
উত্তর কোরিয়ার কমান্ডোরা পুলিশ আসার আগেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজধানীতে ঢুকে পড়েন।তারা নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর পোশাক পরিধান করেন। ফলে একপ্রকার বিনা বাঁধায় এভাবেই তারা প্রবেশ করে যান ব্লু হাউজে।

ব্লু হাউজ
কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশের ১০০ মিটার দূরে তারা প্রসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্ব এ থাকা সেনা অফিসারদের জেরার মুখে পড়েন। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার এক পর্যায়ে তা বন্দুকযুদ্ধে রূপ নেয়। শুরু হয় দুইপক্ষের বিশাল বন্দুকযুদ্ধ ঘটনাস্থল থেকে অনেক কমান্ডো পালাতে সক্ষম হন।

ব্লু হাউজে আক্রমণের দৃশ্য
কিন্তু তাদেরকে পরে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়। কেউ কেউ অবশ্য নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পথে আত্মহত্যা করেন। একজন কমান্ডোকে জীবিত গ্রেফতার ধরা হয় তার নাম কিম সিন জু।

ছবিতে উত্তর কোরিয়ার কমান্ডো কিম সিন জু
পরবর্তী কয়েক বছর পরে কিম সিন জু প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় থেকে যাবার ইচ্ছা পোষণ করেন। প্রেসিডেন্ট তাকে ক্ষমা করে দেন এরপরে তিনি একটি চার্চের যাজক হয়ে বাকি জীবন পার করেন। অপরদিকে কমপক্ষে ৯০ জন দক্ষিন কোরিয়ান সেনা ও পুলিশ পুরো ঘটনাপ্রবাহে নিহত হন।
Leave a Reply