“বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত” এই মূলমন্ত্র ধারন করে ১৯৭১ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর গঠিত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী।
পাকিস্তান বিমানবাহিনী থেকে পলাতক স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশী পাইলটরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আকাশযুদ্ধ করার জন্য অনেক আগ্রহী ছিলেন, কিন্ত এয়ারক্রাফট ছিল না। মুজিবনগর সরকারের কাছেও বিমান কেনার মত টাকা ছিল না। পরে ভারত তাদের অবসরে পাঠানো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের ১ টি এলিউট হেলিকপ্টার, একটি ডিসি-৩ ডাকোটা ও ১ টি অটার বিমান উপহার দেয়। সাথে ভারতের পাহাড়ি এলাকায় একটি পরিত্যক্ত এয়ারবেজ ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়াররা সেই ঘাটি সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে এবং অবসরে থাকা সেসব পরিত্যাক্ত পরিবহন এয়ারক্রাফটকে পুনরায় চালু করে।
বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়াররা এগুলোকে মডিফাই করে ২ টি রকেট পড লাগিয়ে ১৪ টি রকেট ও কিছু নন গাইডেড ফ্রি ফল গ্রাভিটি বোম্ব নিক্ষেপের ব্যাবস্থা করেছিল।
উল্লেখ্য, বোমাগুলো হাত দিয়ে নিক্ষেপ করতে হত।আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ১৯৬৫ সালের লোংগেওয়ালা যুদ্ধে ভারত সেসময়ের আধুনিক হকার হান্টার নিয়েও রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর হামলার সাহস করেনি। কিন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুর্ধর্ষ পাইলটরা ২য় বিশ্বযুদ্ধের আমলের পরিত্যক্ত বিমান নিয়েই পাকবাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে তাদের রসদ সাপ্লাই লাইনের বারোটা বাজিয়েছিল।
১৯৭১ এ বাংলাদেশের বিজয়ের পর পাকবাহিনী ভারতের লুটপাটের অংশ হিসেবে ভারতের হাতে পড়ার ভয়ে তারা ১০+ এয়ারক্রাফট একত্রে রেখে বোমা মেরে নস্ট করেছিল। পরে বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়াররা সেসকল বিমানের একটার ইঞ্জিন, অন্যটার ককপিট, আরেকটার রাডার…এভাবে জোড়া লাগিয়ে ৫ টা এফ-৮৬ স্যাবর জেট চালু করতে সক্ষম হয় (এভাবেই বিভিন্ন পার্টস জোড়া লাগিয়েই ভারত তেজাস বানিয়েছে)।
সেইসব ড্যামেজড এফ-৮৬ এর পার্টস জোড়া লাগিয়ে “বানানো” এফ-৮৬ গুলোই ছিল বাহিনীর প্রথম প্রথাগত এটাক এয়ারক্রাফট। পরে রাশিয়া থেকে কেনা ১২ টি মিগ-২১ ছিল প্রথম সুপারসনিক যুদ্ধবিমান (সেকালে এগুলো এখনকার টাইফুন, রাফালের মত ইফেক্টিভ ছিল)। তারপরে ধীরে ধীরে প্রচুর বিমান যুক্ত হয়।
ভারত ও পাকিস্তানের পরে আমাদেরই ছিল এ অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহিনী। স্বর্নযুগ চলাকালে ১৯৯০ সালে মায়ানমারের ভেতরে ঢুকে শো ডাউন করে বার্মিজ সেনাদের FUP(Forming Up Place) তছনছ করে দিয়েছিল আমাদের বিমানবাহিনী।
১৯৯১ সালের সাইক্লোনে একসাথে ৯০+ এয়ারক্রাফট ধংস হওয়ার পর বিমানবাহিনী এক ধাক্কায় অনেক পিছিয়ে যায়।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে মোট সদস্য সংখ্যা ১৫,০০০+
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এয়ারক্রাফটের তালিকা নিচে দেয়া হল,
কম্ব্যাট এয়ারক্রাফটঃ
- Mikoyan MiG-29 = ৮ টি
- Chengdu F-7 = ৪০ টি
(এদের মাঝে ১৬ টি F7BGI, ১৬ টি F7BG এবং ৮ টি F7MB)
- Yak-130(রাশিয়া) = ১৩ টি
- Nanchang PT-6(চীন) = ২৪ টি
- Aero L-39 Albatros(চেকস্লোভিয়া) = ৯ টি
- FT-7(চীন) = ১১ টি
- Hongdu K-8(চীন) = ৯ টি (আরো ৭টি অর্ডারে)
ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফটঃ
- LET L-410 Turbolet(চেক প্রজাতন্ত্র) = ৩ টি
- C-130 Hercules(যুক্তরাষ্ট্র) = ৪ টি
- C-130J Super Hercules(যুক্তরাষ্ট্র) = ২ টি(অর্ডারে)
- AN-32(ইউক্রেন) = ৩ টি
- Mi-17/171(রাশিয়া) = ৩৩ টি
- Bell-212(যুক্তরাষ্ট্র) = ১৩ টি
- AW-139(ইতালি) = ২ টি (বিভিন্ন সূত্রমতে আরো ২ টি অর্ডারে আছে)
- Bell-206(যুক্তরাষ্ট্র) = ৪ টি
গাইডেড অস্ত্রঃ
- FM-90 সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল
- PL-2 এয়ার টু এয়ার মিসাইল
- PL-5 এয়ার টু এয়ার মিসাইল
- PL-7 এয়ার টু এয়ার মিসাইল
- LS PGB
- FT PGB
- OFAB100/200
- R-27 BVR মিসাইল
- R73 এয়ার টু এয়ার মিসাইল
- Kab500 টিভি গাইডেড বোমা
এছাড়া রয়েছে আরো কিছু মডেলের গাইডেড ও আনগাইডেড বোমা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ
- বাংলাদেশে Mi-17 হেলিকপ্টারের মেইনটেন্যান্স প্লান্ট খোলা হবে। অলরেডি F-7 বিমানের ওভারহোলিং প্লান্ট নেয়া হয়েছে।
- ৮ টা মিগ-২৯ কে নতুন এডভান্সড রাডার ও সেন্সর লাগিয়ে আপগ্রেড করা হবে।
- ৩-৪ টি এটাক ড্রোন কেনা হবে।
- অন্তত ৮ টি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কেনা হবে।
- এছাড়া, ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় ৪৮-৯৬ টি চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কেনা হবে (২০৩০ সালের মাঝে)।
- আরো ১৬-২৪ টি ইয়াক-১৩০ এডভান্সড জেট ট্রেইনার কেনা হবে।
- এছাড়া আরও পরিবহণ হেলিকপ্টার ও এটাক হেলিকপ্টার যুক্ত হবে।
1 Pingback