১০৬৩ খ্রিস্টাব্দ। সুলতান আল্প আরসালানের হাত থেকে আর্মেনিয়া কেড়ে নেবার জন্য কনস্ট্যান্টিনোপলের সম্রাট রোমানাস ছুটে এলেন। ফ্রান্স, ম্যাসিডোনিয়া, বুলগেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের সেনাদল তার সাহায্যে ছুটে এসেছে।

সুলতান আরসালান ৪০ হাজার সৈন্য নিয়ে ছুটে গেলেন সম্রাট রোমানাসকে বাধা দিতে। সুলতান আরসালান শান্তির প্রস্তাব দিলেন রোমানাসকে। সমুদ্র তরঙ্গমালার মত বিশাল বিক্ষুব্ধ সেনাবাহিনীর অধিনায়ক রোমানাস শান্তির প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন।

শান্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে সুলতান আরসালান রোমানাসের মোকাবেলা করার যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা সন্নিবেশ করলেন। কিন্তু তার কত মুসলিম ভাই যে এ যুদ্ধে প্রাণ দেবে,সেটা চিন্তা করে সুলতান আল্প আরসালানের প্রাণ কেঁদে উঠল। তিনি উচ্চস্বরে গম্ভীর কণ্ঠে সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে বললেন, “যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যদি কেউ চলে যেতে চাও, যেতে পার। কাউকেই আমি জোর করে যুদ্ধে যোগদান করতে প্ররোচিত করব না।”

কিন্তু যে সেনাপতি তার সৈন্যদের জন্য এত দরদ পোষণ করেন সে সেনাপতিকে তার সৈন্যরা মৃত্যুর মুখে ছেড়ে যেতে পারে না। সুলতান আরসালানের ক্ষেত্রেও তাই হলো। সকলেই এক বাক্যে সুলতানের অনুগামী হতে চাইলো।

সুলতান গোসল করে শুভ্র পোশাকে সজ্জিত হয়ে সৈন্য পরিচালনার জন্য ঘোড়ায় আরোহণ করলেন।সঙ্গীদের তিনি বললেন, “যুদ্ধক্ষেত্রের যেখানে আমার মৃত্যু হবে সেখানেই যেন আমাকে কবর দেয়া হয়।”

বস্তুত শাহাদাতে দুর্লভ পেয়ালা পানের আশায় যুদ্ধে যাচ্ছেন সুলতান আল্প আরসালান। তার প্রতিটি সৈন্যও এই মন্ত্রে দীক্ষিত।

যুদ্ধ শুরু হল আর্মেনিয়ার প্রান্তরে।রক্তের প্রবাহ ছুটছে যুদ্ধের গোটা ময়দানে। ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী অকুতোভয়ে মোকাবেলা করে যাচ্ছে বিশাল শত্রু বাহিনীকে। এক সারি শহীদ হয়ে ঢলে পড়ছে মাটিতে, সঙ্গে সঙ্গে পেছনের সারি সামনে এগিয়ে এসে সে স্থান পূরণ করছে। শত্রু নিধন করে শাহাদাতের পেয়ালা পানের নেশায় পাগল হয়ে উঠেছে তারা। দুঃখ নেই,কাতরোক্তি নেই। অশ্বের গতিবেগের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি ও ধ্বংসলীলা উঠছে আর পড়ছে।

অবশেষে বদর, খন্দক, ইয়ারমুক, আজনাদাইনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলো। দিনশেষে মাগরিবের সময় সমাবেশের শুভ মুহূর্তে আল্লাহর অফুরন্ত দয়ায় বিজয় নেমে এলো মুসলিম শিবিরে। জয়ী হলেন সুলতান আল্প আরসালান।

যুদ্ধ শেষে বন্দী রোমানাসকে সুলতান আরসালানের সামনে নিয়ে আসা হলো। সুলতান জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার জায়গায় আপনি হলে আমার জন্য কি শাস্তির ব্যবস্থা করতেন?” রোমানাস বললেন, “নির্মম বেত্রাঘাতে আপনার দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে দিতাম।”

সুলতান হাসলেন। বললেন, “আপনাদের বাইবেল বলে,‘শত্রুকে ক্ষমা করো’। আমি আপনাদের বাইবেলের উপদেশ অনুসারেই আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম। যান আপনি মুক্ত।”

তথ্যসূত্র: আমরা সেই সে জাতি – ১ম খণ্ড

লেখায়ঃ Azher Mahmud

Facebook Comments

comments