মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের তৈরি এম১ আব্রামস (M1 A2 Abrams) ট্যাংক বর্তমানে সার্ভিসে থাকা সকল ট্যাংকগুলোর মধ্যে এটিকে সবচেয়ে আলাদা বলে অভিহিত করে থাকে। একে আলাদা বলার পেছনে এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে যাদের মধ্যে অন্যতম এর ইঞ্জিন।

এই ট্যাংকটিতে একটি ১৫০০ অশ্বশক্তির গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন লাগানো রয়েছে যা কেবল মাত্র এই আব্রামস ছাড়া আর কোন ট্যাংকে নেই। এই গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন প্রায় ৭০ কিলোমিটার প্রতিঘন্টার গতিতে চালনা করতে সক্ষম।

এই গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিনের একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এদের যেকোন জ্বালানী দ্বারা চালনো সম্ভব যা সাধারণ ডিজেল ইঞ্জিনের ট্যাংকে সম্ভব নয়। সাধারণ ডিজেল ইঞ্জিন শুধুমাত্র ডিজেলে চলে কিন্তু আব্রামসের গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন জেট ফুয়েল থেকে শুরু করে রাস্তার কিনারে পেট্রোল পাম্প থেকে নেওয়া যেকোন ফুয়েল কেরোসিন, অকটেন, পেট্রল ও ডিজেল দ্বারা চলতে সক্ষম !

মূলত গ্যাস টার্বাইন ইঞ্জিন সাধারণত হেলিকপ্টারে ব্যবহার করা হয় এবং আব্রামসে যে হানিওয়েল এজিটি ১৫০০ ইঞ্জিন ব্যাবহৃত হয়েছে তার একটি মডিফায়েড ভার্সন ব্ল্যাক হক ও অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের জন্যও তৈরী করা হয়েছিল যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি হেলিকপ্টারগুলোতে ব্যবহার করা হয়নি !!!

 

M1 Abrams এর মাল্টি লেভেল আর্মার কে বলা হয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আর্মার। এই আর্মার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সিরামিকস, স্টীল, প্লাস্টিক কম্পোজিট, কেভলার এর মতো পদার্থ। ১৯৮৭ সালে এর আর্মারে যোগ করা ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়াম শিল্ড।

১৯৮০ সালের M1 Abrams এর মেইনগান ছিলো ১০৫ এমএম। পরে তা পরিবর্তন করে ১২০ এমএম মেইনগান সংযোজন করা হয়। এর মেইনগান ফায়ারিং এ এইম করার জন্য আছে লেজার গাইডেড সিষ্টেম। এতে ব্যবহৃত হয়েছে এডভ্যান্স ব্যালেন্স সিষ্টেম যা কিনা ভালো ঝাকুনির মাঝেও সঠিক এইম নিশ্চিত করে। এই দুই সমন্বয়ে এর অ্যাকুরেসি অন্য যে কোন ট্যান্কের চেয়ে উন্নত।

M1 Abrams এর মেইনগান ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে। এবং এর ইন্টারনাল সাইট ভিউ হিসাবে আছে হিট সিকিং ইনফ্রারেড সেন্সর যা এর আশেপাশে প্রায় ১.৫ কি.মি. এর মধ্যে থাকা অট্যাকেবল সকল কিছুকে ডিটেক্ট করতে পারে। এতে ২ টা জয়ষ্টিক কন্ট্রোলড ৭.৬৬ এমএম মেশিনগান আছে যা ট্যাংকের ভেতর থেকেই অপারেট করা যায়। এ ছাড়া আছে স্মোক জেনারেটর যার ফলে এই ট্যাংকে কে স্মোক গ্রেনেড এর উপর নির্ভর করতে হয় নাহ।কোন দুর্ঘটনা এড়াতে এর ভেতরে ফায়ারিং শেল রাখার জন্য আছে আলাদা চেম্বার।

 

বিবরণঃ

  • ডিজাইনার: US Army, Chrysler Defense & General Motors
  • ভর: ৬৮ টন
  • অপারেশনাল রেন্জ : ৪৭০ কিলোমিটার
  • ক্রু ম্যান: ৪ জন
  • ইন্জিন: ১৫০০ হর্স পাওয়ার (১, ১২০ কিলোওয়াট) গ্যাস টারবাইন ইন্জিন
  • ফুয়েল ক্যাপাসিটি: ১৯০০ লিটার


গতি:

  • অফরোড – ৪৯ কি.মি. /ঘন্টা
  • রোড – ৬৯ কি.মি. /ঘন্টা


আর্মামেন্টঃ

  • মেইনগান: ১২০ এমএম এটিজিএম ক্ষেপনযোগ্য


সেকন্ডারি পার্টস:

  • একটি .৫০ ক্যালিবার হেভী মেশিন গান
  • একটা ৭.৬৬ এমএম মেশিনগান(জয়ষ্টিক কন্ট্রোল)
  • একটা ৭.৬৬ এমএম কোএক্সিয়াল মেশিন গান(জয়ষ্টিক কন্ট্রোল)
  • ইন্টারনাল স্মোক জেনারেটর

 

সার্ভিসে আসার পরে এই ট্যাংক প্রথম ব্যবহার করা হয় ১৯৯০ এ গালফ ওয়ার এর সময়। সে সময় বেশ কিছু ট্যাংক ইরাকিদের হাতে ধ্বংস হলেও উইনিং সাইড এই ট্যাংকের দিকেই যায়। ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধে মোটামুটি সংখ্যার Abrams হারিয়েছে আমেরিকানরা।

শেষ কথায় শক্তিশালী আর্মার থাকা সত্বেও এই ট্যাংক অজেয় নয়। তবে এর পারফরমেন্স এই ট্যাংককে অন্য সব ট্যাংক থেকে আলাদা করে রেখেছে। আমেরিকা এই ট্যাংক কে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত সার্ভিসে রাখার ঘোষনা দিয়েছে।

 

Facebook Comments

comments